‘অবিশ্বাস্য লড়াই, একেবারে দুর্দান্ত’- এই ছিল রবীন্দ্র জাদেজার উদ্দেশে ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের বিশেষ বার্তা। যিনি লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টে প্রাণপণে লড়াই করেও দলকে জেতাতে পারেননি। মাত্র ১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে ভারতের। লর্ডসে বল হাতে তাণ্ডব চালান ইংল্যান্ডের দুই পেসার—জোফ্রা আর্চার ও অধিনায়ক বেন স্টোকস। ম্যাচের চতুর্থ দিনের শেষ ঘণ্টায় ইংল্যান্ডের আগুন ঝরানো স্পেলে ৫৮/৪ হয়ে পড়ে ভারত।
পঞ্চম দিনের প্রথম ঘণ্টায় স্টোকস-আর্চার জুটি ভারতের মিডল অর্ডার ধ্বংস করে দেয়। ১১২ রানে ৮ উইকেট হারায় ভারত। তবুও হার মানেননি জাদেজা। শেষদিকের ব্যাটার বুমরাহ ও সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। ২২ ওভার ক্রিজে কাটানোর পর বুমরাহ এক অনাবশ্যক শটে আউট হন স্যাম কুকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তখন ভারতের সামনে দাঁড়িয়ে কেবল একটাই উইকেট। সেই সময় ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব এসে পড়ে একমাত্র অপরাজিত ব্যাটার জাদেজার কাঁধে।
শেষমেশ সিরাজকেও বোল্ড করে দেন শোয়েব বশির। উইকেট হারানোর পর হতবিহ্বল সিরাজ হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। অন্যদিকে, জাদেজা ১৮১ বলে অপরাজিত ৬১ রান করেও বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে হেরে গেছেন। হারার দু’দিন পর শুক্রবার, বিসিসিআই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে। সেই ভিডিয়োতে দেখা যায় গম্ভীর কীভাবে জাদেজার প্রশংসা করছেন।
গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘ওটা ছিল একেবারে অসাধারণ লড়াই। জাড্ডুর লড়াইটাই ছিল সবচেয়ে দুর্দান্ত।’ ভারতের এই হার ইংল্যান্ডকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ এগিয়ে দেয়। ১৩.২ ওভার রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে লড়াই করা সিরাজ বলেন, ‘দলে, একজন প্লেয়ার হিসেবে, জাড্ডু ভাই অসাধারণ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব দিকেই ওর উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ও দলের জন্য সব সময় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করে। এমন প্লেয়ার খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। আমাদের দলে ও আছে, এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের।’
জাদেজার ব্যাটিংয়ে সেই বিখ্যাত 'তলোয়ার চালানো উদযাপন' বারবার উঠে এসেছে। প্রথম ইনিংসেও তিনি ৭২(১৩১)-র এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। ইংল্যান্ডে টানা চারটি ফিফটি করে প্রমাণ দিয়েছেন, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা তাঁর কতটা।
ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে বলেন, ‘ওর ব্যাটিং এখন অন্য এক স্তরে পৌঁছে গেছে। শেষ দুটো টেস্টে ও যে ধৈর্য, স্থিরতা দেখিয়েছে—তা ড্রেসিং রুমে সবার মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে। ওর ডিফেন্স এখন একেবারে শক্তপোক্ত। ওকে এখন একেবারে একজন ‘প্রপার ব্যাটার’-এর মতোই লাগে।’
ভারতের ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক জাদেজার মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করেছি, ওর মধ্যে চাপ সামলানোর দারুণ ক্ষমতা আছে। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে ও আরও পরিণত হয়েছে। ওর অভ্যাস হলো, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে দলের জন্য কিছু না কিছু করে ফেরা। সত্যিই দারুণ মূল্যবান একজন ক্রিকেটার।’