দুরন্ত ছন্দে পঞ্জাব কিংসের ব্যাটাররা। সোমবার (২৬ মে) আইপিএলের ৬৯তম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ৭ উইকেটে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় পঞ্জাব। সেই সঙ্গে তারা পৌঁছে গেল আইপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে। এদিকে হার্দিক পান্ডিয়ার মুম্বই লিগ পর্ব শেষ করল চারে থেকেই। তাদের আর পজিশন বদলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। চতুর্থ টিম হিসেবেই তারা প্লে-অফে খেলতে নামবে।
এদিকে পঞ্জাব শীর্ষে ওঠায়, দুইয়ে নেমে গেল গুজরাট টাইটান্স। তিনে রয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তারা আবার মঙ্গলবার (২৬ মে) লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে খেলবে। এই ম্যাচে বেঙ্গালুরু জিতলে তিনে নেমে যাবে গুজরাট টাইটান্স। সেক্ষেত্রে আরসিবি এবং পিবিকেএস-এর রানরেটের উপর নির্ভর করবে কোন দল শীর্ষে এবং কোন দল দুইয়ে শেষ করবে। পঞ্জাবের দুইয়ের মধ্যে থাকা নিশ্চিত। বাকি কোন দল দুইয়ের মধ্যে শেষ করবে, সেটাই এখন দেখার!
সূর্যের হাফসেঞ্চুরিতে অক্সিজেন পায় মুম্বই
টসে জিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন পঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। ব্যাট করতে নেমে মুম্বই শুরুটা ভালো করতে পারেনি। শুরুটা খুবই মন্থর হয়েছিল। টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর, রোহিত শর্মা যেন ফের ছন্দে হারিয়ে ফেলেছেন। একটু খেলছিলেন রায়ান রিকেলটন। কিন্তু তিনি ২০ বলে ২৭ করে মার্কো জানসেনের ডেলিভারিতে শ্রেয়সকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। রোহিত এদিন সেভাবে কিছুই করতে পারেননি। ২১ বলে ২৪ করে আউট হন তিনি। হরপ্রীত ব্রারের হলে নেহাল ওয়াধেরাকে সহজ ক্যাচ দেন।
তবে রিকেলটন আউট হলে তিনে ব্যাট করে নেমেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। তিনি কিন্তু নিজের ছন্দে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে শুরু করেন। তবে সূর্যকে সঙ্গত করার মতো কেউ ছিলেন না। সূর্য নামার পরে রোহিত সাজঘরে ফেরেন। এর পর তিলক বর্মা (১), উইল জ্যাকস (১৭) নিরাশ করেন। ছয়ে নেমে মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া কিছুটা হলেও সূর্যের সঙ্গে মুম্বইয়ের হাল ধরেছিলেন। তবে একবার তিনি জীবনদান পেয়েছেন। শূন্য রানের মাথায় নিজের বলেই হার্দিকের ক্যাচ ফেলে দেন বিজয়কুমার বৈশক। সেই সুযোগ পেয়েও, হার্দিক বিশেষ কাজে লাগাতে পারেননি। দু'টি চার এবং দু'টি ছয়ের হাত ধরে তিনি ১৫ বলে ২৬ রান করে জানসেনের ডেলিভারিতে জোশ ইংলিসকে ক্যাচ দেন।
আরও পড়ুন: একজন অধিনায়কের পারফরম্যান্সের চেয়ে, ব্যবহার বেশি গুরুত্বপূর্ণ… শুভমন গিলকে কেন একথা বললেন গাভাসকর?
একটা সময় মনে হচ্ছিল, ১৭০-রও পার করতে পারবে না মুম্বই। তবে ১৯তম ওভারে বিজয়কুমার বৈশককে পিটিয়ে ২৩ রান নেন নমন ধীর এবং সূর্যকুমার যাদব। তবে শেষ ওভারে বল করতে এসে আর্শদীপ সিং প্রথম ডেলিভারিতেই ফেরান নমন ধীরকে। দু'টি ছয়ের হাত ধরে ১২ বলে ২০ করে প্রিয়াংশ আর্যকে ক্যাচ দেন নমন। তা না হলে হয়তো মুম্বই রান আরও একটু বাড়ত। ওভারের শেষ বলে সূর্যকুমার যাদবকেও এলবিডব্লিউ করেন আর্শদীপ। তবে স্কাইয়ের ৩৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংসই মুম্বইয়ের জন্য বড় অক্সিজেন হয়। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ২টি ছক্কা এবং ৬টি চারে। এই ওভার থেকে মাত্র তিন রান হয়। তা না হলে হয়তো মুম্বইয়ের স্কোর ২০০ টপকে যেত। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৮৪ রান করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
পঞ্জাবের সবচেয়ে সফল বোলার আর্শদীপ সিং। তিনি ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। এছাড়া মার্কো জানসেন ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ২ উইকেট এবং বিজয়কুমার ৪ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। আর্শদীপ সিং আবার ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন।
সহজ জয় ছিনিয়ে নিল পঞ্জাব
রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চম ওভারেই প্রভসিমরন সিংয়ের উইকেট হারায় পঞ্জাব কিংস। ১৬ বলে ১৩ করে জসপ্রীত বুমরাহের বলে অশ্বিনী কুমারকে তিনি ক্যাচ দেন। তবে আর এক ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য নিজের চেনা মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন জোশ ইংলিশ। দুই তারকাই হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন। এবং দলের জয়ের ভিত তৈরি করে দেন। দ্বিতীয় উইকেটে প্রিয়াংশ এবং ইংলিশ মিলে ১০৯ রান যোগ করেন। তবে ১৫তম ওভারে প্রথম বলে মিচেল স্যান্টনার সাজঘরে ফেরান প্রিয়াংশকে। ততক্ষণে পঞ্জাবের জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। ২টি ছক্কা এবং ৯টি চারের হাত ধরে ৩৫ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। ইংলিশ সাজঘরে ফেরেন ১৮তম ওভারে। তখন জয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্জাব। জয়ের জন্য তখন আর মাত্র ১৪ রানের দরকার ছিল। ৪২ বলে ৭৩ করে স্ট্যান্টনারের ডেলিভারিতে আউট হন ইংলিশ। তাঁর ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা, ৯টি চার। এরপর বাকি কাজটা শ্রেয়স আইয়ার এবং নেহাল ওয়াধেরা মিলে করে দেন।