কিছু খেলোয়াড় কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও নিজস্ব গল্প লিখে থাকেন। ঋষভ পন্তের সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তন এমনই একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। যদিও তিনি হেডিংলে টেস্টে ভারতকে জেতাতে পারেননি, তবুও উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে তিনি কেবল ইতিহাসই তৈরি করেননি, সমালোচকদের যোগ্য জবাবও দিয়েছেন।
হেডিংলের দুর্দান্ত গল্প
১৩৪ এবং ১১৮… এই দুটি স্কোর কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার সদর্প ঘোষণা। পন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন। অথচ এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের কয়েক মাস আগে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বর্ডার-গাভাসর ট্রফিতে পন্তের ফর্ম উদ্বেগের বিষয় ছিল।
মেলবোর্ন টেস্ট হয়ে ওঠে টার্নিং পয়েন্ট
পাঁচ টেস্টে মাত্র ২৫৫ রান, ২৮.৩৩ গড়ে। অস্ট্রেলিয়ায় পন্তের আক্রমণাত্মক স্টাইলকে তখন ‘বোকামি’র তকমা দেওয়া হয়েছিল। এবং মেলবোর্ন টেস্টে তাঁর র্যাম্প শট দেখার পর, স্বয়ং সুনীল গাভাসকর ‘স্টুপিড, স্টুপিড, স্টুপিড (বোকা, বোকা, বোকা)’-এর মতো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। এর পর, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটিও ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি পন্ত। এই টুর্নামেন্টে ভারত নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল, কিন্তু পন্তের জায়গা ছিল রিজার্ভ বেঞ্চে।
ডিজিটাল ডিটক্স এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তন
নিজের এই খারাপ ফর্ম কাটিয়ে উঠতে, ঋষভ পন্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে একেবারে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ডিলিট করে দেন এবং তাঁর ফোনটি বন্ধ করে দেন। তিনি একা থাকতেন এবং শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের জন্য তাঁর মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। সব ক্ষেত্র থেকে দূরে থেকে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করাই তাঁর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আইপিএলে ব্যর্থতা, কিন্তু নিজের সঙ্গে আপস নয়
লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়কত্ব করার সময়, তিনি আইপিএল ২০২৫-এ ব্যাট হাতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। পুরো মরশুমে তিনি ৩০০ রানও করতে পারেননি। তবে, শেষ লিগ ম্যাচে আরসিবি-র বিরুদ্ধে তাঁর সেঞ্চুরিটিই ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, পন্তের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে।
ঋষভ পন্ত এখন নতুন উচ্চতায়
নিজেকে বদলে এবং দৃঢ় সংকল্পকে সামনে রেখে পন্ত ফের ফর্মে ফিরেছেন। এবং এখন তিনি আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের সপ্তম স্থানে রয়েছেন। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা র্যাঙ্কিং। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সমালোচনা হোক বা বেঞ্চে বসে থাকা, তিনি সহজে মুষড়ে পড়েন না। বরং আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ফিরে আসেন। এখন ২ জুলাই থেকে এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে ভারত ও ইংল্যান্ড ফের একে অপরের মুখোমুখি হবে। সকলের নজর আবারও সেই খেলোয়াড়ের দিকে থাকবে, যিনি ঠাণ্ডা মাথায় ঝড় তুলতে পারেন।