রাজ্যের তফসিলি জাতি (এসসি) ও উপজাতি (এসটি) তালিকায় ‘অযোগ্য’দের নাম ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠতেই কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে জনজাতি উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে তিনি সরাসরি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দেন এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ফের জেলা সফরে মমতা, প্রকল্প উদ্বোধন থেকে প্রশাসনিক বৈঠক, প্রস্তুতি তুঙ্গে
এ দিনের বৈঠকে জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত এক মন্ত্রী অভিযোগ করেন, এসসি-এসটি তালিকায় এমন বহু মানুষের নাম ঢুকে পড়েছে, যাঁরা আসলে ওই সম্প্রদায়ের নন। তাঁদের নাম থাকার ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা নানা সরকারি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ শুনেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে দেন, বনাঞ্চলের অধিকার এবং অন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে যাতে প্রকৃত জনজাতি মানুষ বঞ্চিত না হন, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী শুধু তালিকা সংশোধনের বিষয়েই নয়, মন্ত্রীদের সক্রিয় ভূমিকার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সরাসরি পৌঁছনোর উদ্যোগ নিতে হবে মন্ত্রীদের, যাতে মানুষের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আরও দৃঢ় হয়। তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় স্বীকারও করেন, অনেক প্রকল্প চালু হলেও প্রচারের অভাবে বহু মানুষ সে সম্পর্কে জানেন না। ফলে সুবিধা বাস্তবে পৌঁছচ্ছে না। সেই ঘাটতি কাটাতে হবে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই নির্দেশ নিছক প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। ২০২১-এ কিছুটা জমি ফিরে পেলেও অনেক এলাকায় বিজেপির প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। তবে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো জনজাতি অধ্যুষিত আসন ফের দখলে আনতে সক্ষম হয়েছে জোড়াফুল। তাই ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে মমতার এই নির্দেশ কার্যত জনজাতি ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকেকে। তবে তাঁরা কেউই হাজির হননি। খগেন মুর্মু পরে জানান, চিঠিতে কোনও এজেন্ডা উল্লেখ ছিল না। এজেন্ডা ছাড়া বৈঠকে গিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই যাননি। এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের শংসাপত্র পেতে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের এক স্কুলের প্রশ্নপত্রে অলচিকি হরফ না থাকা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও কেন এই রকম অবহেলা হবে? মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা যোগ্যরা যেন বঞ্চিত না হন।