বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল জেলের ভিতরে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এক মহিলা, তাঁর স্বামীকে দেখতে। দাবি করা হয়েছে, সেখান থেকেই ক্রমশ গড়ে ওঠে সম্পর্ক। আর পরে সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়েই ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠল এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একাধিকবার ধর্ষণ করে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান তিনি। এ নিয়ে ও মহিলা থানায় অভিযোগ জানাতেই রাজ্য পুলিশের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: আদালতের দ্বারস্থ ধর্ষণের শিকার তরুণী, সন্তানকে বড় করতে চান কুমারী মা হয়েই
জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে ভুয়ো কোভিড ভ্যাকসিন কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হয়েছিলেন মহিলার স্বামী। তাঁকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে দেখা করতে যেতেন তাঁর মহিলা। সেই সময় অর্থাভাবে পড়ায় পরিবারের দুটি গাড়ি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেই সূত্র ধরেই পরিচয় হয় পুলিশের ওই অফিসারের সঙ্গে। জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন মামলায় ধৃতদের জেলে নিয়ে আসা ও নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত এএসআই নিজেকে কলকাতা পুলিশের অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। অভিযোগকারিণীর স্বামীর ‘বন্ধু’ বলেও দাবি করেন।
অভিযোগ, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাড়ি কেনার আগ্রহ দেখিয়ে ওই মহিলাকে ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন তিনি। এরপর গাড়ির বিষয়ে কথাবার্তার অজুহাতে দক্ষিণ কলকাতার ওই মহিলার বাড়িতে যাতায়াত শুরু হয়। সঙ্গে চলতে থাকে মদ ও মিষ্টির উপহার। মহিলার অভিযোগ, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে জোর করে মদ খাইয়ে বেঁহুশ করিয়ে দেন এএসআই। এরপর মেয়েকে অন্য ঘরে রেখে অভিযুক্ত তাঁকে ধর্ষণ করেন। সেই দৃশ্য মোবাইলে রেকর্ড করে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেন। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি গাড়ির বাকি টাকার জন্য অভিযুক্তকে ফোন করেন মহিলা। পরদিন টাকা দেওয়ার অজুহাতে ফের তাঁর বাড়িতে যান অভিযুক্ত, কিন্তু টাকা দেননি। উল্টে ফের মদ্যপান করিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ১৩ এপ্রিল ফের একই কায়দায় ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মদ খাইয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন অভিযুক্ত এএসআই। অভিযোগকারিণীর দাবি, তিনি প্রতিবাদ করলে তাঁকে পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল নেতাজিনগর থানায় ধর্ষণ, প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয় এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। পরে তা স্থানান্তরিত হয় পাটুলি মহিলা থানায়।
সম্প্রতি অভিযুক্ত এএসআইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের জুন মাসে বড়বাজার এলাকায় ডাকাতির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় গ্রেফতার হলেও পরে জামিন পান। ধৃত ব্যক্তি বিবাহিত, তাঁর আদি বাড়ি বোলপুরে। যদিও তাঁর আইনজীবীর দাবি, এএসআই নির্দোষ। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বিষয়টির পিছনে আর্থিক লেনদেনের বিবাদ রয়েছে। আপাতত ২৩ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত।