মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রোবটিক সার্জারি প্রযুক্তির উদ্বোধন করেছিলেন এসএসকেএমে। আর মঙ্গলবারই প্রথমবার তার সফল ব্যবহার ঘটল শল্যচিকিৎসায়। বাংলা ফের একবার প্রমাণ করল আজ যা এখানে শুরু হয়, আগামী দিনে তা দিশা দেখায় গোটা দেশকে। এবার সেই পথপ্রদর্শক হল এসএসকেএম হাসপাতাল। অত্যাধুনিক রোবটিক সার্জারি চালু করে চিকিৎসা পরিষেবায় নতুন অধ্যায় রচনা করল রাজ্যের অন্যতম প্রধান সরকারি হাসপাতালটি।
আরও পড়ুন: এসএসকেমে উদ্বোধন হল নয়া ভবনের, থাকছে প্রাইভেট কেবিন, আরও অনেক সুবিধা
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শল্য বিভাগের এক রোগীর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়েছিল। সেই সঙ্গে গলব্লাডারের দেওয়াল অস্বাভাবিকভাবে মোটা হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, সিরাজ আহমেদ এবং রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মাত্র ৩৫ মিনিটে রোবটের সাহায্যে জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। মাত্র চারটি সূক্ষ্ম ছিদ্র করেই শেষ হয় সার্জারি। রোগীর বাড়ি মুর্শিদাবাদে, এবং তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই দিনে স্ত্রীরোগ বিভাগের এক মহিলা রোগীর জরায়ু অপসারণও হয় এই রোবটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। ৪৬ বছর বয়সি ওই রোগীর সার্জারি করতে সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। অস্ত্রোপচারের পর তিনিও সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচারে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। অথচ এসএসকেএম-এ সরকারি উদ্যোগে তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা সম্ভব হয়েছে। ফলে খুশি রোগী ও তাঁদের পরিবার। চিকিৎসা মহলের মতে, পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সরকারি হাসপাতালে রোবটিক সার্জারি চালু হল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোট ছ’জন চিকিৎসক এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে জটিল শল্যচিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলবে বলে আশাবাদী হাসপাতাল প্রশাসন।
উল্লেখ্য, এর আগে শুধু রোবটিক সার্জারি নয়, একই দিনে আরও ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে অন্যতম ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি নতুন উডবার্ন ওয়ার্ড। ১০ তলা এই ভবনে ১৩১টি আধুনিক কেবিন থাকছে। সিঙ্গল কেবিনের ভাড়া ৫ হাজার টাকা, এইচডিইউ কেবিনের জন্য ১২ হাজার এবং আইটিইউ কেবিনের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসায় খরচ অনেক বেশি। তিনি নিজে কেবিন ভাড়া কমিয়েছেন যাতে সাধারণ মানুষ আরও সহজে পরিষেবা পান। হাসপাতাল হয়তো প্রথমে লোকসানে চলবে, কিন্তু মানুষের স্বার্থই সরকারের কাছে সবচেয়ে বড়। চিকিৎসক মহল বলছে, এই উদ্যোগ শুধু কলকাতার জন্য নয়, গোটা পূর্ব ভারতের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।