বছর দুয়েক আগে ধর্ষণের শিকার হয়ে মা হয়েছিল এক নাবালিকা (বর্তমানে প্রাপ্ত বয়স্ক)। এখন সেই তরুণী নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে চাইছেন। তবে শুধুমাত্র সন্তান ফিরিয়ে দেওয়াই নয়, একজন ‘কুমারী মা’র (সিঙ্গল মাদার) মর্যাদা নিয়েই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছেন তিনি। বনগাঁর বিশেষ পকসো আদালতে সাক্ষী দেওয়ার সময় বিচারকের কাছে এমনই আর্জি জানালেন তরুণী।
আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেনে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের চেষ্টা, গ্রেফতার সিধো কানহো বিরসার অধ্যাপক
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর দশমীর দিন। অভিযোগ, ঠাকুরনগরের বাসিন্দা অমিত বিশ্বাস নামে এক যুবকের তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল। ওই যুবক নাবালিকাকে গাইঘাটার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। সেই সুযোগে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে অমিত। নির্যাতিতা কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার বাসিন্দা। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু, ধর্ষণের ফলে আরও বড় সমস্যা দেখা দেয়। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই পেটের ব্যথা নিয়ে এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয় ওই নাবালিকা। চিকিৎসাধীন অবস্থায়, হাসপাতালের শৌচালয়ে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন নির্যাতিতা। পুরো ঘটনা জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। করা হয় ‘জিরো এফআইআর’। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বনগাঁ মহিলা থানাকে। অভিযুক্ত অমিত বিশ্বাস বর্তমানে তিনি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে নির্যাতিতার সম্মতিতে সদ্যোজাত শিশুকে কলকাতার এক সরকারি হোমে পাঠানো হয়। তবে মাত্র ১১ দিনের মাথায় নির্যাতিতা তার সন্তানকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান। অভিযোগ, হোম কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া দেয়নি। সেই পরিস্থিতিতে বুধবার বনগাঁর বিশেষ পকসো আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের সামনে ফের নিজের সন্তানের দাবি জানান তরুণী। আদালতের উদ্দেশ্যে তরুণীর আবেদন, ‘আমি নিজের সিদ্ধান্তে সন্তানকে হোমে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন তাকে নিজের কাছে রাখতে চাই। আমি কুমারী মা হিসেবেই সন্তানকে বড় করব। আমার পরিচয়েই সে সমাজে মাথা তুলে বাঁচবে।’
এই ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সমীর দাস। তিনি জানান, নির্যাতিতা তরুণী তাঁত সন্তানকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি কোনও পুরুষ সঙ্গী বা স্বামী ছাড়াই সন্তান পালন করতে চান। তবে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত ওই শিশুর খোঁজ মেলেনি। আদালত এর আগে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য শিশুকে হাজির করার নির্দেশ দিলেও, পুলিশ শিশুকে খুঁজে পায়নি বলে জানান সমীর দাস। এই প্রেক্ষিতে আদালত হোম কর্তৃপক্ষকে তলব করেছে।