বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে রোগী মারা গেলে পরিবারের জন্য শোকের পাশাপাশি আরেকটি দুর্ভোগ প্রায়শই দেখা দেয়। সেটা হল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে বিল না মেটানো পর্যন্ত দেহ ছাড়তে অনীহা। কখনও বিল আবার, কখনও বা স্বাস্থ্যবিমার টাকা না মেলায় নানা অজুহাত দেখান কর্তৃপক্ষ। তবে এবার সেই প্রথার রাশ টানল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।
আরও পড়ুন: এক ফোনেই জানা যাবে বেসরকারি হাসপাতালের বেডের খবর, বড় উদ্য়োগ রাজ্যের
সোমবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন-এর পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কোনও রোগীর মৃত্যুর পর সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে। বিল বকেয়া বা বিমার অর্থ মেলেনি এমন কোনও কারণেই দেহ আটকে রাখা চলবে না। নিয়ম অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রয়োজনে সাময়িক দেরি হলে সেটি লিখিতভাবে জানাতে হবে রোগীর পরিবারকে এবং সেই সময় দেহ যথাযথ সংরক্ষণে রাখতে হবে, যাতে পচন ধরার আশঙ্কা না থাকে।
গত ১২ অগস্ট একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর পর প্রায় ১৫ ঘণ্টা দেহ আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। মৃতের পরিবার জানিয়েছিল, মাঝরাতে মৃত্যু হলেও বিমার টাকা না আসা এবং বিলের অজুহাতে পরদিন বিকেল তিনটে নাগাদ দেহ ছাড়া হয়। এর ফলে শেষকৃত্য নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদিও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তোলেননি স্বজনেরা, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির আঙুল ওঠে।
অভিযোগ খতিয়ে দেখেই কমিশন নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ওই পরিবার আলাদা করে প্রায় ৪৬ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল, অথচ তার পরেও দেহ আটকে রাখা হয়েছিল। কমিশনের নির্দেশ, সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। স্বাস্থ্য কমিশনের মতে, টাকার জন্য কোনওভাবেই মৃতদেহ আটকে রাখা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অগ্রহণযোগ্য। তাই এবার থেকে নিয়ম মেনে সময়সীমার মধ্যেই দেহ ছাড়তে হবে। ব্যতিক্রম হলে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না কমিশন।