বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর লাগাতার নিগ্রহ, বাংলাদেশি অপবাদ এবং পুলিশি হেনস্তা ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। আর এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান। রবিবার রঘুনাথগঞ্জের সাইদাপুরে নিজের কার্যালয়ে ১৪৩ জন ভুক্তভোগী শ্রমিককে সামনে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সেখানেই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, এই অত্যাচার চলতেই থাকলে এলাকায় পেলে বিজেপি নেতাদের বেঁধে রাখা হবে।
আরও পড়ুন; মুম্বইয়ে আটক ডায়মন্ড হারবারের শ্রমিক, উদ্ধার করতে বাংলা থেকে টিম পাঠালেন অভিষেক
মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব একে ‘উস্কানিমূলক’ বললেও, মন্ত্রী নিজের অবস্থানে অনড়। তাঁর অভিযোগ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা যত বিজেপি শাসিত রাজ্য, সব জায়গাতেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চলছে। গায়ে হাত তোলা হচ্ছে, বাংলাদেশি বলে তকমা দেওয়া হচ্ছে, পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করানো হচ্ছে। দিনের পর দিন শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ১৪৩ জনকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে এনেছেন।
বিহারের গয়া জেলার একটি সাম্প্রতিক ঘটনা তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি জানান, রঘুনাথগঞ্জের বড়শিমূল গ্রামের ৯ জন নির্মাণ শ্রমিক কাজের জন্য গয়ায় গিয়েছিলেন। দিন পাঁচেক আগে রাতে তাঁদের ভাড়াবাড়িতে হামলা চালায় স্থানীয় বিজেপি সমর্থকরা। এক শ্রমিক রাতে শৌচাগারে গেলে তাঁকে ধরে আনা হয়, বাকি শ্রমিকদের ঘুম থেকে তুলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেওয়া হয়। বাংলাদেশি বলে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর আসে স্থানীয় থানার পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশও শ্রমিকদের কথা না শুনে তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়, তল্লাশির নামে হেনস্থা করে এবং কার্যত ঘরে বন্দি করে রাখে।
এক ভুক্তভোগী শ্রমিক জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে সেখানে কাজ করেন। হঠাৎ তাঁদের বাংলাদেশি বলে গালাগাল দেওয়া শুরু হয়। পুলিশও তাঁদের কথা না শুনে উলটে তাঁদের উপর চড়াও হয়। ভয়ে তিনদিন ঘরের বাইরে বের হননি। পরে বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে ফিরে আসেন। একই ধরনের অভিযোগ এসেছে ঝাড়খণ্ডের কিউঝাড় এলাকা থেকেও। সেখানে অন্তত ১০ জন শ্রমিককে হেনস্থা করা হয়েছে বলে জানা যায়। ওড়িশার এক ঘটনাতেও শতাধিক শ্রমিককে আটক করে রাখা হয় একটি কলেজে। পরে কাগজপত্র দেখানোর পর দুই দিন বাদে তাঁদের ছাড়া হয়। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে বিএসএফ, ভিন রাজ্যে বিজেপি প্রশাসন ও পুলিশ সব জায়গায় বাংলার শ্রমিকদের গায়ে হাত পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে। বিজেপি নেতারা যদি বাংলায় বড় বড় কথা বলেন, তাঁদের এলাকার মানুষের উপর অত্যাচার চালান, তাহলে তাঁদের এখানে এলাকায় দেখলে সাধারণ মানুষ আর ছেড়ে কথা বলবে না।