তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। একুশের নির্বাচনের আগে সেই ঘটনা কেউ ভোলেননি। চোখের জল ফেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি জড়িয়ে দমবন্ধ অবস্থা কাটাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু একুশের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই মোহভঙ্গ হয়েছে তাঁর। তাই আবার ফিরে আসেন তৃণমূল কংগ্রেসে। হ্যাঁ, অন্যান্য অনেকের মতো তিনিও ফিরে আসেন। নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই রাজীব পৌঁছে গেলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুয়ারে। আজ, রবিবাসরীয় সকালে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে রাজীব ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও বলেছেন বলে দাবি সাংসদের। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে সৌজন্য সাক্ষাত বলে দাবি করেছেন। তবে দাদা কল্যাণ ভাই রাজীবকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
রাজনীতির ময়দানে যে কেউ চিরশত্রু নয় তার বহু নজির রয়েছে। সেখানে কল্যাণ এবং রাজীবের মিলন ঘটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই রাজীবকে ‘হাইব্রিড নেতা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন একদা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আজ সেই কল্যাণের দুয়ারেই হাজির রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মিল হয়ে গেল দাদা–ভাইয়ের। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে ডোমজুড় বিধানসভা। বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকে রাজীবের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে যায়। প্রকাশ্যে এসেছে কাদা ছোড়াছুড়ি। রবিবার, ছুটির দিনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এলেন রাজীব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রবীর ঘোষাল। তিনিও বিজেপি ঘুরে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরেছেন। কল্যাণবাবু বলেন, ‘রাজীব বলল, ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও। আমি বললাম, দিদি যখন তোমায় দলে নিয়েছে, আমি কেন কিছু বলব।’
আরও পড়ুন: দিঘায় চালু হয়ে গেল পুলিশ ক্যাম্প, জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী, তুঙ্গে প্রস্তুতি
আগামী ২০২৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন আছে। তার আগে রাজীব–কল্যাণ মিলন বিরোধীদের কাছে চাপ তৈরি করবে এটাই দস্তুর। তবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এখন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে একদিকে পূর্ব মেদিনীপুর অপরদিকে ত্রিপুরার দায়িত্ব সামলে নিচ্ছে। আর রাজীবকে খোঁচা দিয়ে এই কল্যাণই আগে বলেছিলেন, ‘হাইব্রিড নেতা’, ‘আমি সব পারেতেই আছি ভাসিয়ে দিয়ে ডিঙা। রাজীবের ভ্যালু ইজ জিরো, সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। ওকে নিয়ে কী উপকারিতা হবে।’ আর আজ বাড়িতে গিয়ে দেখা করতেই রাজীবকে ‘ভাই’ বলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন কল্যাণ।
এখন পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। রাজীব যে তৃণমূল কংগ্রেসেরই তা মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তাই তাঁর উপকারিতা এখন দেখতে পেয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজীব বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দল পরিবর্তন করেছিলাম বলে দাদার অভিমান হয়েছিল। তা থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। আজ যখন শ্রীরামপুরে এসে দাদার সঙ্গে গিয়ে দেখা করি তখন সেই দূরত্ব ঘুচে গেল। দাদা ভাইয়ের সম্পর্ক ভালবাসাও থাকবে, রাগও থাকবে,অভিমানও থাকবে, অভিযোগও থাকবে। আজ খুব ভাল লাগল। দাদা জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলেন। আমরা একই দল করি। আগামী দিনে দাদা ভাইয়ের সম্পর্ক অটুট থাকবে।’ আর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘রাজীব দলে জয়েন করেছে অনেকদিন আগেই। দিদি ওকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছে। রাজীব আজকে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। বলল দাদা ভুল হয়েছে। ক্ষমা করো। আমার সঙ্গে ওর ব্যক্তিগত কোন সমস্যা ছিল না। একটা কষ্ট ছিল। ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো।’