বুধবার চিনের রাজধানী বেজিং আন্তর্জাতিক সংবাদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ হয়ে ওঠে। উপলক্ষ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের ৮০ বছর পূর্ণ হওয়ার। আর সেই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ,উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন-সহ ২৬টি দেশের শীর্ষ নেতার সামনে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করল। মার্কিন সমরবহর সম্পর্কে যে অলীক ধারণা মানুষের মনে ছিল, সেই আবছায়া দূর করে দিয়েছেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বেসর্বা শি জিনপিং। আর এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানকে কী বিকল অস্ত্র দিয়েছিল চিন?
বুধবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৮০-তম বর্ষপূর্তিতে চিনের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। সেখানে রেড আর্মি, নৌ ও বিমানবাহিনীর অস্ত্র-ওয়ার্ডরোবের শোকেস দেখেই তাজ্জব হয়ে গিয়েছে পশ্চিমী দুনিয়া। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির এই ধরনের অস্ত্রভাণ্ডারের কুচকাওয়াজ খুবই বিরল। চিন সম্পর্কে যে অজ্ঞাত ধারণা ছিল, তা দূর করে এদিন বিশ্ববাসীকে সেনাবহর ও অস্ত্রশস্ত্রের একাংশ নমুনা প্রদর্শন করেছে শি জিনপিংয়ের দেশ। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেন যে চিন কারুর হুমকিতে ভীত নয়।
ক্ষেপণাস্ত্র
এই কুচকাওয়াজে চিন পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের জন্য সামনে নিয়ে এল। এই ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্র, ভূমি ও আকাশ থেকে একসঙ্গে ছোড়া যায়। এই প্রথম ‘ত্রিনাথ’ ক্ষমতাধর ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত পরমাণু অস্ত্র প্রকাশ্যে নিয়ে এল বেজিং। যার মধ্যে রয়েছে- আকাশ থেকে ছোড়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র জিংলেই-১, সাবমেরিন থেকে হামলা চালানোয় সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র জিংলেই-৩ এবং ভূমি থেকে ছোড়ার মতো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ডংফেং-৬১ ও ডংফেং-৩১।চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম শিনহুয়া লিখেছে, এসব অস্ত্র দেশের সার্বভৌমত্ব, আত্মসম্মানের রক্ষাকবচ।ডংফেং-৫সি হল ১৯৭০ সালে শুরু হওয়া চিনের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সাম্প্রতিকতম সংস্করণ। একটিমাত্র নির্দিষ্ট নিশানায় তরল জ্বালানির এই ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে বহু ও নানান রকমের অস্ত্রবর্ষণে সক্ষম।
এদিন প্যারেডে ছিল শব্দের থেকে পাঁচগুণ বেশি গতিসম্পন্ন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র। এরমধ্যে ছিল- য়িংজি-১৯, য়িংজি-১৭ ও য়িংজি-২০। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হল- ছ্যাংজিয়ান-২০এ, য়িংজি-১৮সি, ছ্যাংজিয়ান-১০০০ এবং হাইপারসনিক য়িংজি-২১, ডংফেং-১৭ ও ডংফেং-২৬ডি। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের মতে, এগুলির প্রত্যেকটি শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষাকালের উপযোগী যুদ্ধাস্ত্র।
লেজার অস্ত্র
অত্যাধুনিক যুদ্ধে মানবহীন আকাশ হানায় ড্রোনের কার্যকারিতা বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। ড্রোন হামলা রুখতে চিন বেশ কিছু লেজার অস্ত্র তৈরি করেছে। এই কুচকাওয়াজে সেই ড্রোন ধ্বংসী ব্যবস্থার আপাদমস্তক ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মিসাইল গান, হাই এনার্জি লেজার অস্ত্র এবং হাইপাওয়ার মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র। এই সামগ্রিক ব্যবস্থা আকাশ, ভূমি ও নৌশক্তি অর্থাৎ ত্রিফলা ক্ষমতাসম্পন্ন।
ড্রোন
এদিন চিন আকাশ ও জলের নীচে চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন সামনে নিয়ে এসেছে। এছাড়া আক্রমণকারী ও শত্রুনিকেশে সক্ষম ড্রোনেরও প্রদর্শনী করেছে। জাহাজ থেকে উৎক্ষিপ্ত চালকহীন হেলিকপ্টার দেখে সম্পূর্ণ অবাক হয়ে গিয়েছে বিশ্ব। এছাড়াও বিরাট নৌবহরের ক্ষমতা, যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ এবং মাইন পোঁতার ব্যবস্থাও দেখিয়েছেন শি জিনপিং।
অতিথি তালিকা
কুজকাওয়াজ পরিদর্শনের জন্য বেজিংয়ে আমন্ত্রিত ২৬ জন রাষ্ট্রনেতার নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে চিনের স্টেট কাউন্সিল। তাঁদের মধ্যে আছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট লুয়ং কুয়ং, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মনানগাগওয়া, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিচ, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল।তালিকায় আরও আছে মমায়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লাইং, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো প্রমুখ রাষ্ট্রনেতার নাম। তবে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের সবাই বেজিংয়ে গেছেন কি না, সেটা নিশ্চিত নয়।