পুজোর আগে খুশির হাওয়া উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১৭০টি বড় চা বাগানে শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে ২০ শতাংশ হারে বোনাস। মহালয়া অর্থাৎ দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার আগে বাকি অধিকাংশ বাগানেই বোনাস বিতরণ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে চা বাগান মহল।
আরও পড়ুন: ৬ কিমি হাঁটানো হল ম্যানেজারকে, শ্রমিক অসন্তোষে বন্ধ জলপাইগুড়ির চা বাগান
রাজ্যের তরফে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোনাস দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স মিলিয়ে ২৭৬টি শেড গার্ডেনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৫২টিতে বোনাস দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি বাগানগুলিতেও ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া চলছে। ডুয়ার্সে গত বছর যেখানে শ্রমিকরা ১৬ শতাংশ হারে বোনাস পেয়েছিলেন, সেখানে এবার ২০ শতাংশ পাওয়ায় খুশি শ্রমিকদের পাশাপাশি চাঙ্গা হয়েছে গ্রামীণ হাটবাজারও। তবে এরই মধ্যে নতুন বিতর্কও সামনে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের নাম ভাঙিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বোনাসের টাকা থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে চা মহলে শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূলের চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান নকুল সোনার দাবি করেছেন, দলের সংগঠন রসিদ দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেয়, এটা নতুন কিছু নয়। সব সংগঠনই করে থাকে। তবে যদি কেউ বিনা রসিদে সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে টাকা তোলে, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি যুগল ঝা অভিযোগ করেন, অনেক বাগান কর্তৃপক্ষ এখনও বোনাস দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করছে। গেট মিটিং শুরু হয়েছে। ১৮ তারিখ শ্রম দফতর ঘেরাও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব রামঅবতার শর্মা জানান, ২৭৬টি বাগানকেই এ বছর বোনাসের আওতায় আনা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ১৫২টি বাগানে ২০ শতাংশ হারে বোনাস বিতরণ হয়েছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু বাগানে বোনাস দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি বাগান কিস্তিতে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
জলপাইগুড়ি শহরের চারটি চা বাগানের মধ্যে করলাভ্যালি, ডেঙ্গুয়াঝাড় ও ভান্ডিগুড়ি এই তিনটিতে ইতিমধ্যেই বোনাস মিটে গিয়েছে। তবে জয়পুর চা বাগানের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক এখনও বোনাস পাননি। মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোনাস দেওয়া হবে। অন্যদিকে রায়পুর চা বাগান গত আট বছর ধরে বন্ধ। ফলে ওই বাগানের শ্রমিকরা বোনাস থেকে বঞ্চিত হলেও পাতা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রাজ্য সরকার অবশ্য তাদের সরকারি সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। উৎসবের আগে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে অধিকাংশ চা বাগানে বোনাসের টাকা পৌঁছে যাওয়ায় এখন শ্রমিক মহলে স্বস্তি।