আসানসোল-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতিতে। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে কয়লাখনিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইডি, সিবিআই চেয়ে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন তিনি। আর তারপরই নিজেই সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দেশে জঙ্গি ঢুকিয়ে যুদ্ধের নাটক করছে বিজেপি’, কেন্দ্রকে এবার তুলোধনা আজাদের
জানা যাচ্ছে, আজাদের চিঠির বিষয়বস্তু ছিল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ইসিএল (ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড)-এ কাজে নিয়োগ, বণ্টন ও আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলে কীর্তি আজাদ চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডিকে। অভিযোগের তির সরাসরি তৃণমূলেরই কিছু নেতার দিকে। এই চিঠি সামনে আসতেই শুরু হয় জল্পনা তৃণমূল সাংসদ নিজেই কি তাঁর দলের ভিতর দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন? আর তাও এমন এক সময়ে, যখন রাজ্য রাজনীতিতে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে চাপের মুখে শাসকদল। কিন্তু, ওই চিঠি পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কীর্তি আজাদ ফের লেখেন আরেকটি চিঠি, যেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগের চিঠিতে কিছু তথ্যগত বিভ্রান্তি ছিল। সেই কারণে তিনি ওই চিঠি প্রত্যাহার করছেন এবং অনুরোধ করা হচ্ছে যেন সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া না হয়।
এই ‘ইউ-টার্ন’ নিয়েই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপেই কীর্তিকে পিছু হটতে হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কীর্তি আজাদ হয়তো সত্যিই কিছু ভুল তথ্য পেয়েছিলেন, আবার কেউ বলছেন, চিঠি প্রত্যাহার করলেও যে বার্তা পৌঁছে যাওয়ার ছিল সেটি পৌঁছে গিয়েছে।
তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, যেহেতু সাংসদ নিজেই জানিয়েছেন যে চিঠিতে তথ্যগত ভুল ছিল, তাই এই ইস্যুতে আর কিছু বলার নেই। তাছাড়া এমন চিঠি দিয়ে কোনও লাভও হয় না। তবে দলের তরফে যতই হালকাভাবে নেওয়ার চেষ্টা হোক না কেন, এক সাংসদের তরফে প্রকাশ্যে ইডি-সিবিআই তদন্তের দাবি দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তৃণমূল বরাবর দাবি করে এসেছে যে, তারা পরিবারের মতো এবং পরিবারে ছোটখাটো মতবিরোধ স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পরিবারের অন্দরে যদি কেউ চুরি-জালিয়াতির অভিযোগ তোলে, আর তার তদন্ত চায় কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে, তা হলে সেটা কি কেবল ‘ভুল তথ্য’ বলে খারিজ করা যায়? এই ঘটনার জেরে নতুন করে সামনে উঠে এল তৃণমূলের অন্দরমহলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং মতবিরোধ।