বাংলাদেশি সন্দেহে ভিন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ বারবার সামনে আসছে। সেই আবহে এবার হরিয়ানার গুরুগ্রামে বাংলাভাষী যুবকদের জামাকাপড় খুলিয়ে পরীক্ষা করার অভিযোগ উঠল। এই অভিযোগ ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগের তির সরাসরি হরিয়ানা পুলিশের দিকে। গুরুগ্রামের ঝাড়সা এলাকার এক বস্তিতে দুই পরিযায়ী শ্রমিক দাবি করেছেন, কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই তাঁদের থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার, শংসাপত্রের জন্য ইটাহারে সহায়তা শিবির
জানা গিয়েছে, গত ১৮ জুলাই রাত প্রায় ১১টা নাগাদ সেক্টর ১০এ থানার পুলিশ পরিচয়পত্র যাচাইয়ের অজুহাতে চারজন যুবককে থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে একজন অসমের চিরাং জেলার বাসিন্দা, অপরজন উত্তর দিনাজপুরের। দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে হরিয়ানায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ তাঁদের জামাকাপড় খুলিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরে থাকতে বাধ্য করে। চলে শারীরিক পরীক্ষার নামে লজ্জাজনক তল্লাশি। এরপর তাঁদের বাদশাপুরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে আরও ১০ জনের সঙ্গে আটকে রাখা হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা থানা ও পরে চার দিন ডিটেনশন সেন্টারে কাটিয়ে অবশেষে ছাড়া পান ওই দু’জন। যদিও পুলিশের দাবি, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, পরিচয় যাচাইয়ের জন্য কয়েক জনকে থানায় আনা হয়েছিল। কাউকে জামাকাপড় খুলতে বলা হয়নি। সমস্ত প্রক্রিয়া আইন মেনেই হয়েছে।
কিন্তু, অভিযোগকারীদের বক্তব্য একেবারেই অন্যরকম। তাঁদের কথায়, বারবার বলেছেন তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। পরিচয়পত্রও দেখিয়েছেন। তবু পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশি বলে অপমান করে, জামাকাপড় খোলায়। এর পরে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, কেবল ভাষা বা চেহারার ভিত্তিতে কাউকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহ করা এবং তার জেরে এমন অপমানজনক আচরণ কতটা আইনসম্মত? হরিয়ানায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে পুলিশের চলতি অভিযান ঘিরেই এই ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, সেই অভিযানের নামে কোনও নিরপরাধ ভারতীয় নাগরিকের উপরও কি চাপে পড়ছে না? এদিকে, বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এই ধরনের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সম্প্রতি তিনি জানান, হরিয়ানা সরকার বাংলার ৫২ জন শ্রমিকের তালিকা দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্যকে। শুধু হরিয়ানা নয়, দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতেও বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাভাষীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে।