একটানা বৃষ্টি। আর তার জেরে পাহাড় যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেই ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারালেন এক বাবা ও তাঁর আট বছরের মেয়ে। বুধবার বিকেলে দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ি ব্লকের গোকে এলাকায় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। পাহাড়ের ঢালে পাইপ মেরামতের কাজ করতে গিয়ে আচমকা ধসে চাপা পড়লেন বছর আঠাশের প্রনীল লিম্বু ও তাঁর ছোট্ট মেয়ে সামান্থা লিম্বু।
আরও পড়ুন: ধসে বন্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক! শিলিগুড়ি-সিকিম রাস্তায় বাড়ল ভোগান্তি
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বিকেলে বাড়ির কাছেই পানীয় জলের পাইপলাইন সারানোর কাজ করছিলেন প্রনীল। সঙ্গে ছিল তাঁর মেয়ে সামান্থা। হঠাৎই ওপরে থেকে গড়িয়ে পড়ে বিশাল পাথর ও মাটি। মুহূর্তের মধ্যেই সব চাপা পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রনীলের। সামান্থাকে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ধসের খবর পেয়ে উদ্ধারকাজে নামে দমকল ও পুলিশ। গভীর রাত অবধি চলে উদ্ধার অভিযান। প্রনীলের দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় দার্জিলিং সদর হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন। ঘটনাটি গভীর দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) সভাসদ কেশবরাজ পোখরেল। তিনি জানান, একটি পরিবার এই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় সব হারাল। জিটিএর পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে পাশে থাকা হবে। বৃহস্পতিবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন জিটিএ-র প্রধান অনিত থাপা।
স্থানীয় বাসিন্দা অনিল রাই জানাচ্ছেন, প্রনীল জলের পাইপ বসানোর কাজ করছিলেন সামান্থা পাশেই ছিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসে বড় বড় পাথর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা চাপা পড়ে যান। বুধবারও দার্জিলিং ও সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অবিরাম বৃষ্টিপাতের জেরে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। দার্জিলিং পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০টি বাড়ি। পাশাপাশি, জাতীয় সড়ক ১০-এর সেভক ও শ্বেতিঝোরা এলাকায় ধসের ফলে ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। যদিও সকাল নাগাদ ধস সরিয়ে আংশিকভাবে ফের চালু হয় পথ। বিকল্প রুট হিসেবে গরুবাথান, আলগাড়া হয়ে কালিম্পং ও সিকিম যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। উল্লেখ্য, চলতি বর্ষায় এই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল পাহাড়ে। গত বছরের ৩০ জুলাই ধসে মৃত্যু হয়েছিল প্রেম সুব্বা নামে এক শ্রমিকের। তিনি ঘুমের কাছে পাইপলাইনের কাজ করছিলেন।