ভয়াবহ অভিযোগ উঠল শহরের একবালপুরের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হতে গেলে চিকিৎসক নন, এক সহকারী নিজেকে আরএমও সেজে ইনজেকশন দেন। সেই ঘটনার পরেই গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয় বলে দাবি পরিবারের। পরে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানানো হলে পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সেই ঘটনায় কড়া নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন।
আরও পড়ুন: অপারেশনের পর ২১জন রোগীর শরীরে একই ধরনের সমস্যা, নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তদন্ত
জানা যাচ্ছে, গত ৬ অগস্ট অলকা রায় নামে ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা তীব্র যন্ত্রণায় একবালপুরের নার্সিংহোমে যান। তাঁর অভিযোগ, সেখানে অবিনাশ কুমার নামে এক ব্যক্তি নিজেকে আরএমও (রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার) পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। শুধু প্রেসক্রিপশনই লেখেননি, ইনজেকশনও দেন তিনি। ইনজেকশনের কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। বাড়ি ফেরার কিছু পরেই মহিলার গর্ভপাত হয়। পরে জানা যায়, যিনি চিকিৎসা করেছিলেন তিনি আসলে ডাক্তারই নন, চিকিৎসকের সহকারী। অভিযোগ পেয়ে স্বাস্থ্য কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কমিশনের নির্দেশে নার্সিংহোমটি অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপাতত হাসপাতালটি নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারবে না।
কমিশন অলকা রায়কে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ওই মহিলা জানান, তিনি টাকা নিতে চান না। পরিবর্তে ওই অর্থ রামকৃষ্ণ মিশনকে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কমিশনের চেয়ারপার্সন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইনজেকশনের কারণে সরাসরি গর্ভপাত হয়েছে কি না, তা তদন্তে পরিষ্কার হবে। তবে যেহেতু চিকিৎসক নন এমন কেউ চিকিৎসা করেছেন, মহিলার হেনস্থার বিষয়টি স্পষ্ট। তাই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নার্সিংহোমের মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ওই দিন চিকিৎসকের টেবিলে লেটারহেড থাকায় সহকারী তাতে প্রেসক্রিপশন লিখেছিলেন। ইনজেকশনও তিনি দেন। এখন কমিশনের নির্দেশে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ হওয়ায় হাসপাতালের কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডায়ালিসিস রোগীদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তাই কমিশনের কাছে পুনর্বিবেচনার আবেদনও করা হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিকর্তার রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নার্সিংহোম খোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর কমিশনে রিভিউ পিটিশনের শুনানি হবে। ততদিন বন্ধই থাকবে ওই নার্সিংহোম।