পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার জন্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এপ্রিল থেকে বেশ কয়েকবার চিঠি লিখে ফেলেছে দিল্লিকে। উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ঘটনার একদিন পরই নয়াদিল্লি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সেদিন ঘোষণা করা হয়েছিল, ছয় দশকের পুরনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখবে ভারত। এরপর থেকে পাকিস্তানের জলসম্পদ সচিব সৈয়দ আলি মুর্তজা ভারতের জলশক্তি মন্ত্রককে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছেন। (আরও পড়ুন: পহেলগাঁও নিয়ে মোদীর তোপের জবাব দিল পাকিস্তান, নির্লজ্জের মতো বলল...)
পাকিস্তানের তরফ থেকে চিঠিগুলো কবে পাঠানো হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনটি চিঠি অপারেশন সিঁদুরের পর লেখা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা সূত্রে আরও জানা গেছে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করে হচ্ছে যে, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করতে পারে না এবং এই স্থগিতাদেশ চুক্তির বিধানের লঙ্ঘন।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ভারতের জলসম্পদ সচিব দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় পাকিস্তানের জলসম্পদ সচিবকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছিলেন সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার বিষয়টি। সেই চিঠিতে দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় পাকিস্তানকে লিখেছিলেন, 'সরল বিশ্বাসে একটি চুক্তিকে সম্মান করার বাধ্যবাধকতাই সেই চুক্তির মৌলিক বিষয়। কিন্তু এর পরিবর্তে আমরা দেখেছি যে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরকে টার্গেট করে পাকিস্তান ক্রমাগত সীমান্ত সন্ত্রাস চালাচ্ছে।' এরপর থেকে পাকিস্তানের তরফ থেকে সিন্ধু চুক্তির স্থগিতাদেশে বিরোধিতা করে একাধিক চিঠি লেখা হয়েছিল নয়াদিল্লিকে।
এদিকে পাকিস্তানের চিঠির বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টির সঙ্গে অবগত কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত ২৯ এপ্রিল বলেছিলেন যে প্রতিবেশী দেশটি 'বিশ্বাসযোগ্যভাবে সীমান্ত সন্ত্রাস পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত' পাকিস্তানের সাথে আলোচনায় বসবে না ভারত।
১৯৬০ সালের চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদীর প্রবাহ নিয়ে পাকিস্তানকে যে তথ্য ভারত দিত, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় পক্ষ সেই তথ্য ভাগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। চুক্তির অধীনে জল বণ্টন ব্যবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষে ৮০:২০ অনুপাতে জল দেওয়া হত। অর্থনীতি ও কৃষির জন্য সিন্ধু জল ব্যবস্থার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল পাকিস্তান।
এই আবহে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ সচিব শশী শেখর বলেছেন, পাকিস্তান 'মরিয়া' কারণ তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সিন্ধু জলের উপর নির্ভর করে। শেখর বলেন, 'চুক্তি স্থগিত থাকার পরিণতি পাকিস্তানের জন্য মোটামুটি গুরুতর হবে বলে আমার মনে হয়। কারণ এটি নাগরিক অস্থিরতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।' শেখর দাবি করেন, জলসম্পদ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৬ সালে এই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় নাকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে জল সম্পদ সবার উপকারের জন্য হওয়া উচিত। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর সিন্ধু চুক্তি নিয়ে এই কঠোর পদক্ষেপ করতে পিছ পা হননি মোদী। ১৯৬০ সালে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারটি যুদ্ধে হয়েছিল। তবে এই প্রথমবারের মতো চুক্তিটি স্থগিত করা হয়েছে। পহেলগাঁও হামলার আগেও ভারত সিন্ধু নদের অববাহিকায় প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে চুক্তিটি পারস্পরিক পুনর্বিন্যাসের জন্য অনুরোধ করছিল। তবে তখন পাকিস্তান তাতে কর্ণপাত করেনি। আর এখন জলসংকটের মুখে পড়ে পাকিস্তান বারবার আলোচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছে।