সাধারণত পাকিস্তানকে যে ভাষায় জবাব দেওয়া হয়, সেই কায়দায় কানাডাকে তুলোধোনা করল ভারত। গত বছর খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনার তদন্তে সম্ভাব্য যোগ থাকতে পারতে বলে ভারতীয় হাইকমিশনার এবং অন্যান্য কূটনীতিবিদদের যুক্ত করায় অটোয়াকে একেবারে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। সোমবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, ‘এইসব অযৌক্তিক অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছে ভারত সরকার। আর ভারত সরকার।’ সেইসঙ্গে সাউথ ব্লকের বিবৃতিতে কোনওরকম রাখঢাক না করে চাঁচাছোলা ভাষায় বলা হয়েছে, ‘এটা (জাস্টিন) ট্রুডো সরকারের রাজনৈতিক অস্ত্র, যা ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির উপরে নির্ভর করে।’
শুধু কানাডা সরকার নয়, ব্যক্তিগতভাবে ট্রুডোকেও তুলোধোনা করেছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রতি ট্রুডোর যে শত্রুতা আছে, তা অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নিজের ভোটব্যাঙ্ককে তোল্লাই দিতে ২০১৮ সালে ভারতে এসেছিলেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় এমন সব লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং উগ্রবাদের সঙ্গে যুক্ত আছে। সেক্ষেত্রে কোনও লুকোছাপা নেই। প্রকাশ্যেই তারা ভারত বিরোধিতা করে আসে।
ভারতের রাজনীতিতে 'নগ্ন হস্তক্ষেপ' ট্রুডোর
সেখানেই থামেনি ভারত। এস জয়শংকরের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রকের তরফে কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রুডো যে 'নগ্ন হস্তক্ষেপ' করেছিলেন, সেটা থেকেই স্পষ্ট যে নিজের ভোটব্যাঙ্ককে তোষামোদ করতে উনি কতদূর যেতে পারেন। নিজের সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ট্রুডোরা এমন একটি দলের মুখাপেক্ষী হয়ে আছেন, যে ব্যক্তি খোলাখুলি ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদের ডাক দিয়ে আসে।
নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ভারতের নাম টেনে আনা হচ্ছে, তোপ দিল্লির
নয়াদিল্লির তরফে সাফ জানানো হয়েছে, কানাডার রাজনীতিতে বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপের জেরে যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, সেটা থেকে নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের নাম টেনে আনা হচ্ছে। আর এখন নিজ্জরের হত্যা মামলায় ভারতীয় কূটনীতিবিদদের 'টার্গেট' করার মাধ্যমে সেই দিকে আরও একটা পা ফেলেছে ট্রুডো সরকার।
আর কানাডা সরকারের যে পদক্ষেপের পরে এরকম কড়া ভাষায় ভারত জবাব দিয়েছে, সেটা খলিস্তানি জঙ্গির হত্যা মামলার ক্ষেত্রে করা হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে কানাডার সংসদে দাঁড়িয়ে ট্রুডো দাবি করেছিলেন, নিজ্জরের হত্যা মামলায় ভারতের সম্ভাব্য যোগের ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও সেটার স্বপক্ষে এখনও পর্যন্ত ছিটেফোঁটাও প্রমাণ দিতে পারেনি কানাডা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নিজের সরকারকে বাঁচাতে ভোটব্যাঙ্ককে তোষামোদ করছেন ট্রুডো। যাতে এবারটা উতরে যেতে পারেন।
ভারত পালটা পদক্ষেপ করতে পারে, হুঁশিয়ারি কানাডাকে
তারইমধ্যে নিজ্জরের হত্যা মামলায় ভারতীয় হাইকমিশনার এবং কূটনীতিবিদের ‘পারসন অফ ইন্টারেস্ট’ করা হয়েছে। যে ‘পারসন অফ ইন্টারেস্ট’ শব্দবন্ধটা সাধারণত আমেরিকা এবং কানাডার তদন্তকারী সংস্থা ব্যবহার করে থাকে। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়, যে ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার করা হয়নি বা কোনও অপরাধে সরকারিভাবে অপরাধী হিসেবে দেখানো হয়নি। কিন্তু তাঁর কাছে এমন কোনও তথ্য আছে, যা তদন্তে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: Canada on Nijjar Murder: নিজ্জর খুনে 'জড়িত' ভারতীয় আধিকারিকদের জবাব দিতে হবে, দাবি কানাডার
কানাডা সরকারের সেই পদক্ষেপের পরই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকে তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থিত কানাডার হাইকমিশন যে নিজের সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করতে কাজকর্ম চালাচ্ছে, সেটা নজরে আছে। ভারতীয় কূটনীতিবিদের বিরুদ্ধে যে সাজানো অভিযোগ তুলেছে, সেটার পালটা জবাব দেওয়ার অধিকার ভারতেরও আছে বলে কড়া ভাষায় জানিয়েছে নয়াদিল্লি।