অসম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গ সিঙ্গাপুরে দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন শুক্রবার। বয়স হয়েছিল ৫২। প্রথমে খবর আসে যে তিনি স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় মারা যান। তবে পরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, জুবিন লাইফ জ্যাকেট ছাড়া সাঁতার কাটছিলেন এবং জলে অচেতন হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডুবে মৃত্যু’ কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে সিআইডি-কে পাঠানো হবে। এই আবহে কাজিরাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবিন গর্গ সম্পর্কে এক নাগা ছাত্রের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন নাগাল্যান্ডের মন্ত্রী টেমজেন ইমনা আলং।
বার্তা সংবাদ এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক ব্যক্তির সঙ্গে বচসার সময় ওই কলেজ পড়ুয়া প্রয়াত জুবিন গর্গ সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নাগাল্যান্ডের মন্ত্রী বলেন, প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী শুধুমাত্র অসমেরই নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব এবং ভারতের গর্ব। নাগাল্যান্ডের সমস্ত ছাত্র অসমের জোরহাটের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদে আছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী টেমজেন ইমনা আলং অসমের মন্ত্রী এবং পুলিশ আধিকারিকদের কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, 'এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। যখন আমাদের ছেলেরা জেনেশুনে বা অজান্তে এমন ভুল করে, তখন প্রথমেই ক্ষোভে বা আনন্দে এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল।' তাঁর কথায়, 'কাজিরাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০-৪০০ জনেরও বেশি নাগা ছাত্র নিরাপদে আছে, এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রাগ বা ঠাট্টা-ইয়ার্কির সময় এই ধরনের মন্তব্য করা ভুল এবং অসংবেদনশীল। জুবিন গর্গ শুধুমাত্র অসমের নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব এবং ভারতের গর্ব ছিলেন। আমাদের ছেলে যা বলেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত।'
ঘটনার সূত্রপাত
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। নাগাল্যান্ডের একজন বি.টেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত ছাত্র জুবিন সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করে বলে অভিযোগ। একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা এক ক্লিপে দেখা গেছে, একজন ছাত্র বলছে, 'কে পাত্তা দেয়?' এরপরেই সেই ঘরে উপস্থিত আরও কয়েকজন জবাব দেয়, 'কে পাত্তা দেয়, বলে তুমি কী বোঝাতে চাইছো? আরে, জুবিন দাকে অসম্মান করো না।' তখন ছাত্রটি ফের প্রশ্ন করে, 'রানী মারা যাওয়ার সময় তুমি কি গুরুত্ব দিয়েছিলে? এরকম করো না। জুবিন গর্গ কে?' এই ঘটনার আগে ওই নাগা ছাত্র জোড়হাটে গিয়েছিল। কিন্তু হোস্টেলে ফিরে আসার সময় সে কোনও যানবাহন পাচ্ছিল না। তাই হোস্টেলে ফিরে ওই ছাত্র তার রুমমেটদের কাছে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারপরেই প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বসে।
কয়েকজন ছাত্র সেই ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ছাত্র এবং স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, কাজিরাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একদল ছাত্র, কয়েকজন বহিরাগতদের সঙ্গে জোরপূর্বক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং যার জেরে হুনারু হোস্টেলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।খবর পেয়েই দ্রুত পৌঁছয় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এসপি, অতিরিক্ত এসপি, এডিসি, সার্কেল অফিসার এবং ওআইসি। এছাড়াও যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট এবং হোস্টেল চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।