নগদকাণ্ডে কাঠগড়ায় ওঠা এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার আবেদন শোনার জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করবেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই।বস্তুত, ওই আবেদন সুপ্রিম কোর্টে ত্রিসদস্য ইন-হাউস তদন্ত প্যানেলের রিপোর্ট অগ্রাহ্য করার দাবি করেছে।সম্প্রতি তদন্ত কমিটির ইমপিচমেন্টের সুপারিশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মা।
প্যানেলের দাবি, চলতি বছরের শুরুতে বিচারপতি ভর্মার সরকারি বাসভবন থেকে উদ্ধার হওয়া পোড়া নোটের উপর তাঁর গোপন বা সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ছিল। সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল যশবন্ত ভর্মার পক্ষে আদালতের কাছে সংবিধান সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে এই আবেদনের দ্রুত শুনানি চেয়েছেন। এরপরেই প্রধান বিচারপতি বলেছেন, 'আমি মনে করি আমার পক্ষে এই বিষয়টি তোলা ঠিক হবে না। কারণ এই বিষয়ে আলোচনাতে আমিও অংশ ছিলাম। আমি একটি বেঞ্চ গঠন করব।' তিনি জানান, নগদকাণ্ড এবং বিচারপতি ভর্মার বিষয় নিয়ে তাঁর পূর্বসূরি সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
অন্যদিকে, বিচারপতি ভর্মাকে পদ থেকে অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার খুব তাড়াতাড়ি সংসদে ইমপিচমেন্ট নোটিশ আনার পরিকল্পনা করছে। অগস্টের বাদল অধিবেশনে ১৪৫ জন লোকসভা সদস্য ও ৬৩ জন রাজ্যসভা সদস্য বিচারপতির বিরুদ্ধে আলাদাভাবে নোটিশ জমা দিয়েছে। ১৭ জুলাই বিচারপতি যশবন্ত ভর্মা একটি বিকল্প আবেদনও করেছেন, যা ৮ মে জারি হওয়া সুপারিশ তথা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার পরামর্শ বাতিল করার আবেদনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এটি পরবর্তীতে সংসদে তাঁর ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব ওঠার পথে ছিল।শীর্ষ আদালতে বিচারপতি ভর্মা অভিযোগ জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া বস্তা ভর্তি টাকার মালিক যে তিনিই, তা প্রমাণ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। টাকা উদ্ধারের অভিযোগের সত্যতাও প্রমাণ করতে পারেনি। উল্টে ওই টাকা তাঁর নয়, তা প্রমাণের দায় বিচারপতি ভর্মার উপরে চাপিয়েছে।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু নেতৃত্বাধীন একটি তিনজন বিচারপতির প্যানেল তদন্ত শুরু হয়েছিল। এই প্যানেল ১০ দিন ব্যাপী তদন্ত করে যেখানে ৫৫ জন সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নিয়ে আগুন লাগার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।তদন্ত কমিটি ৩ মে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেয়, যাতে বলা হয় যে পোড়া টাকার বস্তাগুলি বিচারপতি ভর্মার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি স্টোররুমে ছিল। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বিচারপতি ভর্মার ইমপিচমেন্টের সুপারিশ করেছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।