আদালতে জমা পড়ল হাড়হিম করা মেঘালয় হানিমুন হত্যাকাণ্ডের ৭৯০ পৃষ্ঠার চার্জশিট। আর এর সঙ্গেই ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর চাঞ্চল্যকর হানিমুন খুনের ঘটনায় তদন্ত শেষ করল মেঘালয় পুলিশ।এই মামলায় রাজা রঘুবংশীর স্ত্রী সোনম রঘুবংশী ও তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা-সহ পাঁচজনকে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশের হাতে সমস্ত ফরেনসিক রিপোর্ট এলে সহ অভিযুক্ত সিলোমি জেমস, বাড়ির মালিক লোকেন্দ্র টোমার ও নিরাপত্তারক্ষী বলবীর আহিরওয়ারের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করা হবে। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, সোনমের সামনেই খুন করা হয় রাজাকে।৭৯০ পৃষ্ঠার চার্জশিটে পাঁচ অভিযুক্তের নাম রয়েছে খুন ধারা ১০৩(১) বিএনএস, প্রমাণ নষ্ট ধারা ২৩৮(এ) বিএনএস এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ধারা ৬১(২) বিএনএস-এর অধীনে। এছাড়া প্রপার্টি ডিলার সিলোমে জেমস, বাড়ির মালিক লোকেন্দ্র তোমর ও নিরাপত্তারক্ষী গার্ড বলবীর আহিরওয়ারের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট জমা পড়বে শীঘ্রই।এবার আদালতে শুরু হবে বিচার। পূর্ব খাসি পাহাড়ের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বিবেক সিয়াম জানিয়েছেন, 'পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে রাজ কুশওয়াহা সঙ্গে সম্পর্কে থাকা সোনম রঘুবংশী মধুচন্দ্রিমার সময় রাজাকে হত্যার জন্য প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিন ভাড়াটে গুন্ডা আকাশ রাজপুত, বিশাল চৌহান, আনন্দ কুরমির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিল।'
ঘটনার সূত্রপাত
গত ১১ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২৯-এর রাজা ও ২৫ বছরের সোনম। এরপরেই ২০ মে ওই দম্পতি মেঘালয় যান হানিমুনে। কয়েকদিন পরই মেঘালয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান রাজা। পুলিশের জোরদার তল্লাশির পর অবশেষে ২ জুন উইসাডং জলপ্রপাতের কাছে একটি গভীর খাদে রাজার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। নিখোঁজের মামলা মুহূর্তে রূপ নেয় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। মেঘালয় পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, সোনম তাঁর প্রেমিক ও কোম্পানির হিসেবরক্ষক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে পরিকল্পনা করেছিলেন রাজাকে খুন করার। বিয়ের আগেই এই ষড়যন্ত্র পাকাপাকি হয়। প্রায় ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয় তিন সুপারি কিলার- আকাশ রাজপুত, বিশাল চৌহান ও আনন্দ কুর্মীকে। পরিকল্পনা ছিল হানিমুনের সময় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে রাজাকে খুন করা।চার্জশিটে বলা হয়েছে, রাজাকে খুনের তিনবার প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল সোনম এবং রাজ। অবশেষে তারা সফল হন।
কীভাবে খুন?
উইসাডং জলপ্রপাতের কাছে ট্রেকিং-এর সময় আচমকা রাজার উপর হামলা চালায় ভাড়াটে খুনিরা। প্রথমে রাজাকে মাচেটি দিয়ে দু’বার কোপানো হয় মাথায়, তারপর দেহ ফেলে দেওয়া হয় গভীর খাদে। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সোনমও। অভিযোগ, খুনের পরই তিনি মাকে ফোন করেন, দু’জনের মোবাইল বন্ধ করে তড়িঘড়ি ইন্দোরে ফিরে যান। অন্যদিকে, প্রথমে উধাও হয়ে যান সোনম। কিন্তু ৮ জুন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে আত্মসমর্পণ করেন সোনম। এর একদিন আগেই পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা ও তিন সুপারি কিলারকে। জেরার সময় একাধিক অসঙ্গতি ও অস্বাভাবিক আচরণ তাঁকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত স্বীকারোক্তিও দেন।
পরিবার কী বলছে?
রাজা রঘুবংশীর দাদা বিপিন রঘুবংশী সব অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা এখনও চার্জশিট পাইনি। আমি সোমবার মেঘালয়ে যাবো এবং তারপর চার্জশিট পড়ব। মেঘালয় পুলিশ এই মামলায় ৭৯০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে। সোনম এবং অন্য সকল অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।' বিপিন অভিযোগ করেন, 'সোনমের দাদা গোবিন্দ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি রাজা রঘুবংশীর ন্যায়বিচারের জন্য লড়বেন। কিন্তু তিনি এখন আর আমার ফোন ধরছেন না। তিনিও তার বোনের মতো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি আমাদের মিথ্যা কথা বলেছেন এবং এখন তিনি তার পরিবারকে সাহায্য করছেন। তিনি এখনও জেলে সোনমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।'