ভুয়ো চিকিৎসক, ভুয়ো পুলিশ, ভুয়ো সিবিআই কিংবা ইডি অফিসার, এমনকী ভুয়ো অফিসেরও হদিশ পাওয়া গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু ভুয়ো দূতাবাস? শুনলেই অবাক হচ্ছেন তো। ভাবছেন এই রকম আবার হয় নাকি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়েছে। গাজিয়াবাদের দিনের পর দিন ভুয়ো দূতাবাস চালানোর অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির নাম হর্ষ বর্ধন জৈন। অভিযোগ, গাজিয়াবাদের কবি নগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ভুয়ো দূতাবাস চালানোর জন্য তিনি ব্যবহার করতেন জাল কূটনৈতিক প্লেট। সেখানে ওয়েস্ট আর্কটিকা দূতাবাসের নামে এই ভুয়ো দূতাবাসটি খুলেছিল। ব্যবহার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ছবি। সেই ছবি দিয়েই তিনি সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন।উত্তরপ্রদেশের আইন ও শৃঙ্খলা বিভাগের এডিজি অমিতাভ যশ বলেন, অভিযুক্ত হর্ষবর্ধন নিজেকে ওয়েস্ট আর্কটিকা, সাবোরগা, পুলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো ছোট দেশগুলির রাষ্ট্রদূত বলে দাবি করেছিলেন হর্ষবর্ধন। বেশ কয়েক বছর ধরে ওই ভুয়ো দূতাবাস চালাচ্ছিলেন অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন-টিকিট নেই, হাতে লেখা সিট নম্বর! বাংলায় ৫৬ তরুণীকে পাচারের ছক, তারপর যা হল...
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি ভুয়ো পদ ব্যবহার করে শেল কোম্পানির মাধ্যমে হাওলা র্যাকেটও চালাতেন। প্রাথমিক তদন্তের পর এসটিএফ জানিয়েছে যে ওই ব্যক্তি মূলত একজন দালাল হিসেবে কাজ করতেন, কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বিদেশে চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করতেন এবং একই সঙ্গে গোপনে হাওলা র্যাকেটও চালাতেন। সেটাই ছিল তাঁর মূল কাজ এবং এই কাজ সফল সুষ্ঠভাবে সম্পন করার জন্যই বাইরে থেকে লোকেজ নজর ঘোরাতে একগুচ্ছ ভুয়ো কার্যকলাপ চালিয়েছিলেন তিনি।প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গেছে, তিনি এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ২০১১ সালে, তার বিরুদ্ধে কবি নগর থানায় অবৈধ স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়াও, তার নাম কুখ্যাত চন্দ্রস্বামী এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাগোশির সঙ্গেও যুক্ত হয়।
জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি নিজের ভুয়ো কার্যকলাপ জনগনের কাছে আরও বেশি করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যবহার করেছিলেন কয়েকটি ছবি। একদিকে যেমন তিনি জাল কূটনৈতিক নম্বর প্লেটযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজের ছবি দেখাতেন। যাতে মানুষের, তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ না জাগে। অভিযুক্তের কাছ থেকে ডিপ্লোমেটিক নম্বর প্লেটযুক্ত চারটি বিলাসবহুল গাড়ি, ১২টি জাল ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট এবং বিদেশ মন্ত্রকের ভুয়ো সিল উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার কাছ থেকে ৩৪টি বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি ও দেশের স্ট্যাম্প, জাল প্রেস কার্ড, প্যান কার্ড এবং প্রায় ৪৪.৭ লক্ষ টাকা নগদ পাওয়া গেছে। এছাড়াও, প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং মোট ১৮টি ডিপ্লোমেটিক নম্বর প্লেটও উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-টিকিট নেই, হাতে লেখা সিট নম্বর! বাংলায় ৫৬ তরুণীকে পাচারের ছক, তারপর যা হল...
এসটিএফের পদক্ষেপের পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কবি নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তার নেটওয়ার্ক কতদূর ছড়িয়ে আছে এবং তিনি এখনও পর্যন্ত কতজনকে তার জালে ফাঁসিয়েছেন তা নিশ্চিত করা হয়নি। পুলিশ এবং তদন্ত সংস্থাগুলি এখন এই পুরো নেটওয়ার্কের তদন্ত করছে।