রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, এনিয়ে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন সোমবার বলেছে যে ওপেন সোর্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে যে প্রকল্পটি ‘আর্থিক অনিয়মের দ্বারা বাধাগ্রস্ত’ হয়েছে। শেখ হাসিনা, ওয়াজেদ উদ্দিন এবং হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে '১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের' পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ। তানিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে।
গত অগস্টে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর বা তার দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু সংস্থা রোসাটম কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে ভারতীয় কোম্পানিগুলো জড়িত রয়েছে। ভারত-রাশিয়া চুক্তির আওতায় তৃতীয় কোনো দেশে পরমাণু শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এটিই প্রথম উদ্যোগ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, 'এই ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কমিশন বলছে, 'বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর মহৎ লক্ষ্য' নিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এখন 'এসব গুরুতর অভিযোগের চাপা পড়ে গেছে'। ঘুষ, অব্যবস্থাপনা, অর্থ পাচার এবং ক্ষমতার সম্ভাব্য অপব্যবহারের অভিযোগ প্রকল্পটির সততা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ উত্থাপন করে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিশেষ আশ্রয় প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ, টিউলিপ সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে আরেকটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন ।
সোমবার দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘটনায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনার পর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরের স্বত্ব ও নৈতিকতা দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
প্রকল্পটি নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করার অভিযোগ অস্বীকার করে লেবার পার্টির এই এমপি এক সরকারি কর্মকর্তাকে বলেছেন, তিনি 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার' শিকার হয়েছেন।
এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের কাছে হস্তান্তর করা এক প্রতিবেদনে কমিশন বলেছে, 'বাংলাদেশের জোরপূর্বক গুম ব্যবস্থায় ভারতের সম্পৃক্ততা সর্বজনীন রেকর্ডের বিষয়। কমিশনের আরও অভিযোগ, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে 'বন্দি বিনিময়ের চর্চা' সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে।
কমিশন বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে একটি ধারণা রয়েছে যে, কিছু বাংলাদেশি বন্দি এখনও ভারতের কারাগারে থাকতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আমরা বৈদেশিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করছি যে, ভারতে এখনও কারাগারে থাকতে পারেন এমন কোনও বাংলাদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে।
ভারতীয় পক্ষ এখনও এই অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি, যা এমন এক সময়ে এসেছে যখন নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক নতুন তলানিতে রয়েছে। ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে।