যে মানুষগুলি সহনাগরিকদের বাড়ি-বাড়ি কিংবা রাস্তায় নর্দমা পরিষ্কার করেন, যাঁরা মাঝেমধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গৃহস্থের বা কোনও সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শোচালয়ের সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করেন, তাঁরা মূলত সমাজের কোনও শ্রেণী থেকে আসেন? এটাই ছিল প্রশ্ন। তার যে জবাব কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পাওয়া গিয়েছে, তা যথেষ্ট ভাবার বিষয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা তথ্য অনুসারে, এই সাফাইয়ের কাজের সঙ্গে যে মানুষগুলি যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই আদতে তফসিলি শ্রেণিভুক্ত।
লোকসভায় এই ইস্যুতে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত করা হয়েছিল। সেই প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য সামনে এনেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে।
তিনি জানিয়েছেন, 'ন্যাশনাল অ্য়াকশন ফর মেকানাইজ্ড স্যানিটেশন ইকোসিস্টেম'(নমস্তে) প্রকল্পের তথ্যভাণ্ডার অনুসারে, ভারতে প্রশাসন স্বীকৃত সাফাইকর্মী ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্য়া ৫৪,৫৭৪। তাঁদের মধ্যে ৩৭,০৬০ জনই হলেন তফসিলি শ্রেণির অন্তর্গত।
এখানেই শেষ নয়। ওই একই তথ্যভাণ্ডার অনুসারে, এই পেশার সঙ্গে বাদবাকি যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১৬ শতাংশ শ্রমিক হলেন ওবিসি বা অন্য়ান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত।
এছাড়াও, নর্দমা ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে ৮.৩ শতাংশ হলেন তফসিলি উপজাতিভুক্ত। অন্যদিকে, ৮.১ শতাংশ শ্রমিক হলেন জেনারেল কাস্ট বা সাধারণ শ্রেণিভুক্ত।
অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এই সাফাইকর্মীদের মধ্য়ে ৯২ শতাংশই তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্য়ান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত!
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, আমাদের দেশে ও সমাজে যে আজও প্রায়ই সামাজিক শ্রেণির ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করা হয়, বহু ক্ষেত্রে সমাজব্যবস্থায় কাজের সঙ্গে জাতপাতকে জড়িয়ে ফেলা হয়, তা নিয়ে 'ট্যাবু' যে আজও সমাজে টিকে রয়েছে, এই ধরনের ডেটা বা তথ্যাবলীই তার প্রমাণ।
সাফাইকর্মীর কাজ যেকেনও সমাজ ও দেশের জন্যই অবশ্য প্রয়োজনীয়। তা সত্ত্বেও আজকের দিনে পর্যন্ত এই কাজকে 'ছোট' কাজ হিসাবে গণ্য করেন একটা বড় অংশের মানুষ।
তাছাড়া, আজও এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন তাঁদের প্রাপ্য পরিষেবা ও অধিকার ঠিকমতো পান না। ফলে এই কাজের সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাও জড়িয়ে থাকে। ফলত - আজও নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির মানুষই এই ধরনের কাজ করেন। যাঁরা মূলত, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী হিসাবেই চিহ্নিত।
ঠিক এই জায়গা থেকেই ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নমস্তে প্রকল্প চালু করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। যার লক্ষ্য হল - যাঁরা সমগ্র দেশ ও সমাজকে এমন আবশ্যিক পরিষেবা প্রদান করেন, তাঁদের সুরক্ষা ও সম্মান প্রদানের পাশাপাশি সেই মানুষগুলির ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
এই প্রকল্পের অধীনে এই ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে শ্রমিকদের অবহিত ও সচেতন করা হয়। যাতে কাজ করার সময় তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা সম্ভ হয়।