Surul Jamidar Bari Durga puja: বৈষ্ণবমতে পুজিত হন মা দূর্গা। কিন্তু বলিও হয় পুজোপ্রাঙ্গণে। রয়েছে শালগ্রাম শিলা। সুরুলের জমিদারবাড়ির পুজোয় পরতে পরতে রয়েছে বৈচিত্র্য।
সুরুল জমিদারবাড়ি
কবিগুরুর শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র তিন কিমি পথ পেরোলেই সুরুলের জমিদারবাড়ি। পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই সেখানে আয়োজনের তোড়জোড় শুরু। রাঙা মাটির বুকে মা দুর্গার পুজো চলছে গত ২৮৯ বছর ধরে। পুজোর আগে আগে চরমে ওঠে ব্যস্ততা। নাটমন্দিরে চলে প্রতিমা সজ্জার কাজ। আলোয় ঝলমল করে ওঠে সরকারবাড়ির আনাচ কানাচ।
বাংলার দুর্গাপুজোর চেহারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে অনেকটাই। ভিড় বেড়েছে থিম পুজোর। তার মধ্যেও সাবেক রীতির আবহ ধরে রেখেছে হাতে গোনা কিছু বনেদি বাড়ি। সুরুলের জমিদারবাড়ি তাদের অন্যতম। ষষ্ঠীতে সরকারবাড়িতে মায়ের বোধন। সপ্তমীতে নবপত্রিকাকে স্নানের পর দোলা করে নিয়ে আসা হয়। সেই স্নানের অনুগামী হয় এক জমজমাট শোভাযাত্রা। নবপত্রিকা স্থাপনের পর বাড়ির বয়োজেষ্ঠ সদস্য নাড়ু-মুড়কির লুট দেন। প্রতি বছর তাতে শামিল হন পরিবারের সব সদস্য ও গ্রামবাসীরা।
রথের দিন থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ
কীভাবে শুরু এই সরকারবাড়ির পুজো? ফিরে দেখা যাক সেই ইতিহাস। জমিদারবাড়ির সদস্যদের আদি নিবাস বর্ধমান। বর্ধমানের নীলপুরের ভরতচন্দ্র ঘোষ ছিলেন অপুত্রক। পুত্রসন্তান লাভের আশায় একবার কাশী যাত্রা করেন তিনি। পথে সস্ত্রীক আশ্রয় নেন সুরুলে গুরুর বাড়িতে। গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্য সুরুলের শ্যামসুন্দর মন্দিরের সেবাইত। তিনিই শিষ্যকে উপদেশ দেন সুরুলে থাকতে, সেখানেই পুত্রসন্তান হবে তাঁর। বাস্তবে ফলে যায় গুরুর কথা। সুরুলেই জন্ম নেয় তাদের সন্তান কৃষ্ণহরি।
কৃষ্ণহরির পুত্র শ্রীনিবাস ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করে রীতিমতো সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছিল আড়ে বহরে। তাঁর আমলেই ব্রিটিশরা তাদের ‘সরকার’ উপাধি প্রদান করেন। মূলত জাহাজের পাল তৈরির কাপড় আর নীল চাষের ব্যবসা ছিল এই পরিবারের। ভরতচন্দ্রের আমল থেকেই শুরু সরকারবাড়ির দুর্গাপুজো। শ্রীনিবাস সরকারের আমলে পুজোর আটচালা তৈরি হয়। তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল মোট ১৮ হাজার টাকা*। পরে ছেলেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় পারিবারিক বিবাদের জেরে। সেই থেকে ছোটো তরফের বাড়িতেও আলাদা করে আয়োজন হয় পুজোর। তবে এখন আর বিবাদের রেশ নেই। দুই পক্ষই দুই তরফের পুজোয় সানন্দে যোগ দেন। পর্যটকের ভিড়ও সামাল দেন মিলেমিশেই।
রথের দিন থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা। পাঁচ পুরুষ ধরে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা বানাচ্ছেন সুরুলের রাজবাড়িতে। বর্তমানে সুভাষ সূত্রধর ও তাঁর পু্ত্র রয়েছেন সেই দায়িত্বে। পুজোর দিনে মা সেজে ওঠেন রাজবাড়ির সোনার অলংকারে। বাংলাদেশের শিল্পীর হাতে তৈরি হয়েছিল সেই ভূষণ। দেবীর সব অস্ত্রশস্ত্রই প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। মেয়েরা নন, ষষ্ঠীর রাতে বাড়ির ছেলেরাই থাকেন মাকে সাজানোর দায়িত্বে। পঞ্চমী থেকেই নাটমন্দির আর ঠাকুরদালান সেজে ওঠে বেলজিয়াম থেকে আনা ঝাড়লন্ঠন ও রঙিন বাতিতে। ভিতরে থাকে রেড়ির তেলের প্রদীপ।
পুজোর আটচালা
সুরুলের জমিদারবাড়ির ঠিক উত্তরেই রবীন্দ্রনাথের গ্রামোন্নয়ন প্রকল্প শ্রীনিকেতন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের জমির বেশ কিছুটা পেয়েছিলেন সরকার পরিবারের কাছ থেকেই। জমিদারবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল রবীন্দ্রনাথ আর রথীন্দ্রনাথের। গান্ধিজিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ এক ঘরে রাত কাটিয়েছিলেন। এখনও সেই স্মৃতিদাগ লেগে আছে সরকারবাড়িতে।