Gym Precaution In Winter: শরীর ফিট রাখার নতুন ট্রেন্ড জিম। কমবয়সীদের অনেকেই নিয়মিত জিম যান।শরীরচর্চা করেন। কিন্তু একই সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে জিমের অভ্যাস। গত বছরের কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে। জামনগরের কিশান মানেক, পুণের বিক্রম পারখি, গুজরাটের দ্বারকাদাস মারুদের জুড়ে দিয়েছে একটাই দুর্ঘটনা। জিম করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক। শুধু সাধারণ তরুণ-তরুণী নয়, সেলেবদের মধ্যেও দেখা গিয়েছে এই দুর্ঘটনার চিত্র। ঘটনাচক্রে শীতকাল নানা কারণে শরীরের জন্য বিপজ্জনক। একদিকে যেমন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত, অন্যদিকে রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা। এসবের মাঝে জিম যাওয়ার আগে কী সতর্কতা নেওয়া উচিত? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন ফর্টিস হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জেন চিকিৎসক সঞ্জয় সেনগুপ্ত (দিল্লি এইমসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত)।
প্রেশারে নজর রাখুন
গোড়াতেই হার্টের রোগের বড় কারণ হাই প্রেশার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বললেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘শীতে হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি ব্রেন স্ট্রোকও বেশি হয়। এর কারণ হাই ব্লাড প্রেশার। রক্তনালির সংকোচন হয় বলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তরুণ হোক বা মধ্যবয়স্ক, যারা জিমে যান, তাদের প্রথমে জানতে হবে ব্লাড প্রেশার নর্মাল না হাই। এর জন্য নিয়মিত ব্লাড প্রেশার স্ক্রিনিং জরুরি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিন অন্তর প্রেশার মাপাতে হবে। এখন অনেক কম বয়সে হাই প্রেশার দেখা দিচ্ছে। তাই প্রেশার বেশি থাকলে প্রথমে সেটা কমাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, ওষুধ খেয়ে, নুন খাওয়া কমিয়ে ও জীবনযাপনে কিছু বদল এনে রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে হবে। প্রেশার নর্মাল হলে হালকা এক্সারসাইজ দিয়ে জিম শুরু করতে হবে। অনেকের প্রবণতা থাকে জিমে গিয়ে হাই ইনটেনসিটি ওয়েট ট্রেনিংয়ের। প্রেশার বেশি থাকলে এটা মোটেও উচিত নয়।’
কীভাবে বিপদ ডেকে আনে?
হাই ইনটেনসিটি ওয়েট ট্রেনিং কীভাবে বিপদ ডেকে আনে? চিকিৎসক সঞ্জয় সেনগুপ্তের কথায়, ‘এই ক্ষেত্রে আমরা ফুসফুসে অনেকটা শ্বাস ভরে নিই প্রথমে। এতে হার্টের ধমনীতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে হার্টে প্রেশার বাড়ে। একইসঙ্গে ব্রেনের রক্তনালিতে প্রেশার বেড়ে যায়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত হেমারেজিক স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটে।’
বাড়ির কারও হার্টের রোগ থাকলে
বাড়িতে কারও হার্টের রোগ বা প্রেশারের সমস্যা থাকলে নিজের প্রেশারও চেক করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। সঞ্জয় সেনগুপ্তের কথায়, ‘আমরা তো জানি না আমাদের হার্ট বা ব্রেনের ভিতর কী আছে। স্ক্রিনিং এই ব্যাপারে সাহায্য করে। অনেকের বাড়িতে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ইতিহাস থাকে। প্যানিক অ্যাটাকে ভোগেন কেউ কেউ। হয়তো যিনি জিমে যান, তার রোগগুলি নেই। কিন্তু হাই ইনটেনসিটি ট্রেনিং করলে ARVD বা HCM-র মতো রোগগুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আবার এই ধরনের রোগ সাডেন ডেথ হলে তখনই বোঝা যায়। ফলে আগে থেকে সতর্ক হতে হবে বাড়িতে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে।’
টেস্ট করানো কি জরুরি?
হার্টের এই কঠিন কঠিন রোগগুলি ধরতে কি টেস্ট জরুরি? জিমে যাওয়ার আগে তাহলে টেস্ট করাতে হবে? এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘সবার জন্য জরুরি নয়। কারও বাড়িতে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ইতিহাস থাকলে বা কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হলে তাদের এই টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। ইকো, ইসিজি করলেই এই রোগগুলি ধরা যায়।’
লো ইনটেনসিটি থেকে হাই ইনটেনসিটি
যারা ১০-১১ বছর থেকেই মাঠে যান, খেলেন, তারা শুরু থেকে হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম করলে ততটা সমস্যায় পড়েন না। কিন্তু যারা সেভাবে কিশোর বয়সে মাঠে যাননি, পড়াশোনাতেই বেশি সময় দিয়েছেন, শরীরচর্চার তত অভ্যাস নেই, তাদের জন্য হাই ইনটেনসিটি ট্রেনিং বিপজ্জনক। এমন তরুণ-তরুণীদের প্রথমে লো ইনটেনসিটি ট্রেনিং করা উচিত। তারপর ধীরে ধীরে হাই ইনটেনসিটি ট্রেনিংয়ের দিকে যেতে হবে।
হার্টের ক্যালকুলেটর (ASCVD Risk Estimator)
হার্টের রোগ জানান দেয় একট ক্যালুকুলেটরই। এই নিয়েই বিশদে জানালেন সঞ্জয় সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘ASCVD Risk Estimator বা ASCVD ক্যালকুলেটর নামের একটি বিশেষ ক্য়ালেকুলেটর এখন মোবাইলেই পাওয়া যায়। ১৮ বছর বয়সের পর এই ক্যালকুলেটর সকলের ব্যবহার করা উচিত। এখানে বয়স, লিঙ্গ, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদির ভিত্তিতে হার্টের রোগের ঝুঁকি জানিয়ে দেয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা এটি স্বীকৃতি। এই ক্যালকুলেটরে একটি নির্দিষ্ট মান পেরিয়ে গেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে ব্যক্তিটির। তখন অবশ্যই জিম করার আগে ইকো, ইসিজর মতো টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। রোগ ধরা পড়লে তার ঠিকমতো চিকিৎসা করানো দরকার। সুস্থ স্বাভাবিক হলে তবে তিনি জিম করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও একজন এক্সপার্টের নজরদারি থাকা আবশ্যক।’