শুধু রাজা রামমোহন রায়ের মামার বাড়ি হিসেবে নয়, শ্রীরামপুরের রেললাইন ধারের এই বাড়ি একসময় হিন্দুদের বিখ্যাত টোল হিসাবেও পরিচিত ছিল। ঐতিহ্যময় এই দেশগুরু ভট্টাচার্যের বাড়িতে আজ বহু বছর ধরে প্রথা মেনে চলছে দুর্গাপুজো। তবে এই পুজোর সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, মুসলমানদের কাছ থেকে পুজোর সামগ্রী না নেওয়া পর্যন্ত এই বাড়িতে পুজো শুরু হয় না। জানেন কেন?
গুরু বাড়ি, এই নামেই শ্রীরামপুরের বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত দেশ গুরু ভট্টাচার্যের বাড়ি। কালের নিয়মে টোল বন্ধ হয়ে গেলেও বন্ধ হয়ে যায়নি দুর্গাপুজো। আজও একই নিয়ম মেনে এই বাড়িতে চলে দুর্গাপুজো। প্রতিবছর গুরু বাড়ির প্রতিমা বিসর্জনের পরেই হয় শ্রীরামপুরের বাকি মূর্তি বিসর্জন। তবে প্রতিমা বিসর্জন হলেও মূল কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হয় না, শুধু প্রতিবছর সংস্কার করা হয় প্রতিমার।
(আরও পড়ুন: ছোট্ট ‘দুর্গা’দের নিয়ে একদিনের প্যান্ডেল হপিং! উডল্যান্ডসের অভিনব উদ্যোগ)
রাম মোহন রায়ের বাবা, রমাকান্ত রায়ের সঙ্গে এই পরিবারের মেয়ে তারিণী দেবীর বিবাহ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই মায়ের সঙ্গে বহুবার শ্রীরামপুরে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ইতিহাসের পাতায় কোথাও না কোথাও এই বাড়িটিরও উল্লেখ আছে নিশ্চয়ই।
২০২০ পর্যন্ত এই বাড়ির অন্যতম সদস্য পিনাকীনাথ ভট্টাচার্য নিয়ম মেনে পুজো করতেন কিন্তু মহামারির সময় আচমকাই তাঁর প্রয়াণের পর বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সদস্য শুভ প্রসাদ ভট্টাচার্য সেই ধারা বজায় রেখেছেন। এই বছরও প্রতিবছরের মতো রথ যাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয়েছে। আমডাঙা থেকে মুসলিম প্রজারা পুজোর সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেই ধুমধাম করে শুরু হয়ে যাবে গুরু বাড়ির দুর্গাপুজো।
(আরও পড়ুন: রাত পোহালেই মহাষষ্ঠী, প্রিয়জনকে পাঠিয়ে দিন দিনটির শুভেচ্ছাবার্তা, কী লিখবেন?)
এবার আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন শ্রীরামপুরে এত মুসলিম সম্প্রদায় থাকা সত্বেও কেন আমডাঙা থেকে মুসলিম আসেন এই পুজোয়? আসলে শ্রীরামপুরের ভট্টাচার্যদের জমিদারি ছিল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার আদাহাটায়। সেই গ্রামের বেশিরভাগ প্রজা ছিল মুসলিম, সেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাই পুজোর একটি সিংহভাগ খরচ বহন করতেন।
আজও নিয়ম মেনে আমডাঙার মুসলিমরা গুরু বাড়ির পুজোয় এসে সামগ্রী দিয়ে যান। হিন্দু মুসলিম হানাহানির মধ্যেই দুই জাতির ঐক্যের এত সুন্দর একটি ছবি আপনি দেখতে পাবেন শ্রীরামপুরে এলেই।