আরজি কর (RG Kar Issue) কাণ্ডে এখনও উত্তাল গোটা বাংলা। পুজোর আবহেও যে যার মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এই নারকীয় ঘটনা নিয়ে। কলকাতার বুকে চলছে চিকিৎসকদের অনশন। পুজো সত্ত্বেও আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। এই অবস্থায় কেউ কেউ সমাজ মাধ্যমে দাবি তুলেছেন ধর্ষকরূপী অসুরকে নিধন করার। মা দুর্গার কাছেও অনেকে সেই প্রার্থনা রাখছেন। তবে এই নিয়েই শুরু হয়েছে আপত্তি জানানো। সমাজকর্মীদের একাংশ এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। নিজেদের ফেসবুক পেজে লিখছেন সঙ্গত কারণও।
সমাজকর্মীদের প্রতিবাদ
সমাজকর্মী ছন্দক মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন অসুরের আসল পরিচয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে অসুর ‘ভিলেন’ হলেও আদতে এই জাতির মানুষরা আমাদের দেশেরই বাসিন্দা। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে সরকার। এমনকি পৌরাণিক কাহিনীতে অসুরের তরফে মহিলাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নমুনাও দেখা গিয়েছে। এই অবস্থায় অসুরকে ধর্ষক হিসেবে দাগিয়ে দিতে মোটেই রাজি নন সমাজকর্মীরা। অন্যদিকে অসুর জাতির একাংশও এই সরলীকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন।
ইতিহাস অনুযায়ী অসুর এক অনার্য জাতি
আদতে সমস্ত অশুভশক্তি পরিচায়ক হিসেবে বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে পরিচিত অসুর। যাকে মা দুর্গা বধ করে দেবতাদের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু অসুর মানেই বাস্তবে অশুভ শক্তি তা কিন্তু নয়। বরং ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিকদের আরেকটি তত্ত্ব মহিষাসুরমর্দিনীর কাহিনীর নেপথ্যে আর্য অনার্য জাতির কথা তুলে আনে। বলা হয়, আর্যদের অধিকৃত স্থান দখলের চেষ্টা করেছিল অনার্য জাতির মধ্যে এক উপজাতি যাদের পরিচয় ছিল অসুর বা আসুর। সেই থেকেই তাদের হারিয়ে সাম্রাজ্য উদ্ধারের ঘটনাকে শুভ শক্তির জয় ও অশুভ শক্তির পরাজয় হিসেবে দেখা হয়।
আরও পড়ুন - Qatar Moon Tower Theme: কাতারের মুন টাওয়ার এবার হুগলিতে! শহর থেকে দূরে হলেও তাক লাগাচ্ছে এই পুজো
কী বলছেন অসুর সম্প্রদায়ের নারীরা?
পশ্চিমবঙ্গেও অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন। মূলত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও মালদায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের বসবাস। আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে দুর্গা পুজোয় ধর্ষকাসুর নিধনের দাবি মোটেই ভাল চোখে মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। বরং অসুর প্রজাতির এক নারী সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীকে যথেষ্ট উঁচু চোখে দেখা হয়। এমনকি ধর্ষণজাতীয় কোনও ঘটনা ঘটলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যে জাতির মধ্যে নারীর সম্মান উঁচুতে, তাদেরকেই এমন অপবাদ সইতে হচ্ছে, এই বিষয়টা মেনে নেওয়া যায় না বলেই জানাচ্ছেন তিনি।