একদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন বিরাট কোহলি। এরপর মঙ্গলবার স্ত্রী অনুষ্কাকে নিয়ে প্রেমানন্দ মহারাজের আশ্রমে পৌঁছে যান তিনি। সকালে সাদা গাড়িতে চেপে বৃন্দাবনের শ্রী রাধাকেলঞ্জ আশ্রমে পৌঁছোন দু'জনে। এই সময় তাঁরা দুজনেই মহারাজের সঙ্গে শুধু দেখাই করেননি, তাঁর কাছ থেকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার কথাও শুনেছেন এবং শিখেছেন। প্রেমানন্দ মহারাজ তাঁদের জানিয়েছেন কখন এবং কীভাবে ঈশ্বরের কৃপা পাওয়া যায়।
বৃন্দাবনে প্রেমানন্দ মহারাজের সঙ্গে বিরাট-অনুষ্কার দেখা এবং জ্ঞান অর্জনের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে ভজন মার্গ। যেখানে দেখা যায় বিরাট ও আনুষ্কা প্রেমানন্দ মহারাজের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। তারপর দুজনেই মহারাজের সামনে হাঁটু গেড়ে হাত জোড় করে বসেন। মহারাজজি তাঁদের কাছে জানতে চান, তাঁরা খুশি কিনা? ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি বলেন, ‘এমনটাই হওয়া উচিত।’ এরপর প্রেমানন্দ মহারাজ তাঁদের উভয়কে পার্থিব ভোগ-বিলাস যে মিথ্যা, সেকথাই ব্যাখ্যা করেছেন। কখন এবং কীভাবে ঈশ্বরের কৃপা কারও উপর নেমে আসে সেকথাও জানান তিনি। বিরাট ও অনুষ্কাকে সেসময় মহারাজের কথা পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে শুনতে দেখা যায়।
মহারাজ বলেছেন, ‘ভগবান যখন কাউকে কৃপা করেন, তখন সেটা বৈভব প্রাপ্তির কৃপা নয়, এটা পুণ্য। গৌরব ও খ্যাতি বৃদ্ধি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বলে মনে করা হয় না. অন্তরের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা ঈশ্বরের কৃপা বলে মনে করা হয়। যাতে আপনার অসীম জন্মের সংস্কারগুলি ধ্বংস হবে এবং পরেরটি খুব ভাল হবে। আমাদের স্বভাব বহির্মুখী হয়ে গেছে। এর বাইরে যশ, কীর্তি, লাভ, বিজয় এসব বাহ্যিক বস্তু থেকে আমরা সুখ পাই। ভিতরে ভিতরে খুব কমই কেউ উদ্বিগ্ন।’
প্রেমানন্দ মহারাজ আরও বলেছেন, ‘যখন ঈশ্বর কৃপা করেন, তখন সাধু সঙ্গ দেন। দ্বিতীয়তঃ তাঁরা যখন অনুগ্রহ করেন তখন বিপরীতটাও দেন। তারপর ভেতর থেকে পথ তৈরি হয়ে যায়। এটাই আমার পথ। এটাই পরম শান্তির পথ। এটা শান্তির পথ নয়। ঈশ্বর পথ বলে দেন... প্রতিকূলতা না থাকলে সংসারের আবেগ বিনষ্ট হয় না। কারও যদি বৈরাগ্য আসে, সংসারের প্রতিকূলতা দেখেই বৈরাগ্য তৈরি হয়।’
মহারাজ বলেন, 'সবকিছু আমাদের অনুকূলে, তাই আমরা আনন্দের সঙ্গে তা উপভোগ করি এবং যখন প্রতিকূলতা আসে, তখন আমরা এই মিথ্যা জগতের জন্য দুঃখ পাই। তাই ঈশ্বর ভিতর থেকে পথ তৈরি করে দেন, ঈশ্বর যে এটাই সঠিক। ঈশ্বর বিনা প্রতিকূলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনও ওষুধ নেই। আজ অবধি যে সমস্ত মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁদের জীবন বদলে গেছে, প্রতিকূলতা দেখেই বদলে গেছে। যদি কোনও প্রতিকূলতা আসে, তবে সেই সময় আনন্দিত হও যে এখন ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে।'
প্রেমনন্দ মহারাজ আরও বলেন, 'একেবারে পার্থিব হও, কিন্তু তোমার ভেতরের চিন্তাভাবনা বদলানো উচিত। যদি আপনার অন্তরের চিন্তায় খ্যাতির অনুভূতি না থাকে, আপনার অন্তরের চিন্তায় আপনার সম্পদ বৃদ্ধির অনুভূতি না থাকে। সেখানে একটা অন্তর্নিহিত চিন্তা যেন থাকে যে ঈশ্বর বহু জন্ম অতিবাহিত হয়েছে, এখন আমি আপনার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই। প্রভু, আমি তোমাকে চাই, আর পৃথিবী নয়। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।তাই আনন্দের সাথে ঈশ্বরের নাম জপ করুন, মোটেও চিন্তা করবেন না।'
তখন অনুষ্কা প্রশ্ন করেন, 'জপ করে কি এটা সম্ভব হবে?' প্রেমানন্দ মহারাজ উত্তর দেন, 'সম্পূর্ণ, আমি আপনাকে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বলি... জপ করতে থাক, এই জন্মেই তুমি ঈশ্বরলাভ করবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। '