শনিবার দ্বিতীয় বিয়ে সেরেছেন তাহসান খান। তারপর থেকেই লাগাতার ট্রোলের মুখে বাংলাদেশি তারকা। চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রোজা আহমেদ। চলছে রোজার অতীত নিয়ে কাটাছেঁড়া। পেশায় ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট এবং সমাজ মাধ্যম প্রভাবী তাহসানের স্ত্রী। বয়সে অভিনেতা-গায়কের চেয়ে অনেকটাই ছোট তিনি। ডিভোর্সি, ১১ বছরের কন্যা সন্তানের বাবা তাহসানের সঙ্গে হাঁটুর বয়সী রোজার বিয়ের নিয়ে অনেকেই কটূক্তি করছেন।
কেউ কেউ তো বাংলাদেশের ভাইরাল অসমবয়সী দম্পতি মোশতাক-তিশার সঙ্গেও তুলনা টেনেছেন তাহসান-রোজার। কিন্তু বিতর্ক থেকে দূরে তাহসানকে রোজা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজীবন বিশ্বাসের, সম্মানের। রোজার পুরোনো প্রেম, পিতৃপরিচয় নিয়েও এখন ওপার বাংলার আলোচনা তুঙ্গে।
গত বছর ৪ঠা জুন নিউ ইয়র্কে নিজের ব্রাইডার মেকআপ স্টুডিও লঞ্চের দিন ফেসবুকে নিজের জীবন সংগ্রাম ও পরিবারের লড়াই নিয়ে লম্বা পোস্ট লিখেছিলেন রোজা। তাহসানকে বিয়ের পর নতুন করে ভাইরাল রোজার সেই পোস্ট।
নতুন শুরুর পথে পা বাড়ানো আবেগঘন রোজা জানান, ‘সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয়। কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। অনেক সময় কাঁদলাম। কিন্তু কি মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’ বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান রোজা। বাবার নয়নের মণি। বরিশাল শহরে প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ছবিটা বদলে যায়। রোজার কথায়,বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরাও দূরে সরে গিয়েছেন। কটি ঘটনা উল্লেখ করে রোজা আহমেদ লিখেছিলেন, ‘বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যায়নি, সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাদের এত সম্মান করতেন তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের উপর থেকে। আর সেইদিনটাতেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি তা সবই বাবাকে ঘিরে আর সাথে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাবার ঠিক ২ মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে। আমরা অনেক ঘনিষ্ট ছিলাম একে ওপরের। কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না।’
নিমন্ত্রণ না পাওয়ার কান্না নয়, সেই কান্না ছিল অবহেলার। রোজার বাবা অনেক সম্পত্তি রেখে গেলেও শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সামনে নিজের অধিকার দাবি করতে ব্যর্থ ছিলেন রোজার সরল-সাধাসিধা মা। অল্প বয়সেই রোজার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল আত্মীয়রা। প্রতিবাদ জানান রোজা। তাঁর লক্ষ্য় ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। আক্ষেপের সুরে লেখেন, ‘আমার বয়স কম আর বাবা মারা গিয়েছে কি হয়েছে বাবার আর আমার স্বপ্ন তো মারা যায়নি! ওই দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছে্র লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হব না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কত কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সাথে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভালো না, পর্দা করি না আরো কত কি। মেয়ে তো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এত ভাল প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে।’
পড়াশোনার সামলে টিউশন পড়ানো, স্ট্রাগলের মাঝেই ভাগ্যের জেরে কনে সাজানোর সুযোগ পেয়েছিলেন রোজা। প্রথম ক্লায়েন্টকে দেখে আসতে আসতে অনেক সুযোগ আসতে থাকে। ২০০০ টাকার বিনিময়ে কনে সাজাতেন তাহসানের বউ। সেই সময়ও পরিবারের লোরজন ‘এই মেয়ে আমাদের মানসম্মান ডুবাবে।’
কিন্তু সেই জেদ আর হার না মানা মনোভাব নিয়েই বরিশাল থেকে ঢাকা আর ঢাকা থেকে আতলান্তিক পারে নিউ ইয়র্ক পাড়ি দিয়েছেন রোজা। মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করেছেন, বাবা বেঁচে থাকলে তাঁকে নিয়ে গর্ব করতেন জানিয়েছেন রোজা।
সবার উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে রোজা আহমেদ লেখেন, ‘আমি শুধু একটা কথা বলব, আপনাদেরকে ভেঙে দেবার জন্য হাজার মানুষ থাকবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনাকে একাই চলতে হবে। নিজেকে এমনভাবে গড়তে শিখুন যে যতবার বাধা আসবে ততবার হাসিমুখে মোকাবেলা করুন। যাতে বাধা দেখলেও আপনাকে ভয় পায়।’