সদ্য পুত্রশোক পেয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। বিগত বেশ কয়েকদিনে সোহিনীকে নিয়ে সমাজ মাধ্যমে হয়েছে বহু কাটাছেঁড়া। তবে সোহিনী জানিয়েছিলেন, সমস্ত প্রমাণ নিয়ে তিনি মুখোমুখি হবেন সকলের। সেই কথামতোই ২ সেপ্টেম্বর একটি ভিডিয়ো করেন তিনি।
সোহিনী এবং তাঁর স্বামী দুজনেই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সময় বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সমাজ মাধ্যমে আসতে হয়েছে তাঁদের। দুর্ঘটনার আগের দিন থেকে ঠিক কী কী ঘটেছিল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন তাঁরা।
২২ তারিখ ভোর রাতে হঠাৎ করেই সন্তানের নড়াচড়া কমে যায়। সবকিছু ঠিক নেই এটা বুঝতে পেরেই সোহিনী এবং তাঁর স্বামী তড়িঘড়ি ডাক্তারকে ফোন করেন। ৮টা নাগাদ ডাক্তারের কাছে যেতেই তিনি অক্সিজেন নিতে বলেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বলেছেন, বিগত ৮ মাসে একদিনও সোহিনীকে প্রেসারের ওষুধ খেতে হয়নি। নরমাল ছিল প্রেসার।
আরও পড়ুন: বন্ধু ঋতুর জন্মদিনে আবেগপ্রবণ প্রসেনজিৎ, পরিচালকের স্মরণে কী বললেন রাম কমল?
আরও পড়ুন: 'খুব হিংসে হয়েছিল...', কোন সিনেমায় অভিনয় না করার আক্ষেপ রয়েছে দেবের?
ডাক্তারের কথা অনুযায়ী হাই প্রেসার ছিল সোহিনীর। কিন্তু অনির্বাণের দেখানো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত একদম নরমাল প্রেসার ছিল সোহিনীর। ২২ তারিখ সকালে ডাক্তারের কাছে যেতেই তিনি বলেন, একটি ইউএসজি করিয়ে কল্যাণীর একটি নার্সিংহোমে সোহিনীকে নিয়ে আসতে। এই কথা বলে তিনি চাকদা মেডিকেল কলেজে ক্লাস করাতে চলে যান।
এরপর সোহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর অন্য একটি হাসপাতালে। সেখানেও বলা হয়, শিশু ঠিক আছে। তবে যেহেতু সোহিনীরা তাঁদের ডাক্তার অর্থাৎ এস এন রায়ের এর কাছেই অপারেশন করাতে চাইছিলেন তাই তাঁরা ইউএসজি করাতে যান একটি ডায়গনোস্টিক সেন্টারে। ওখানেও দেখা যায় যে শিশুটি নড়াচড়া করছে। তবে এটাও দেখা যায়, শিশুর গলায় কর্ড জড়িয়ে গিয়েছে। এটা শোনার পরেই আবার ডাক্তারের কাছে যান সোহিনী।
সোহিনীকে পরীক্ষা করে ডাক্তার বলেন, বাচ্চা যেহেতু প্রিম্যাচিউর তাই একদিন অবজারভেশনে রেখে তারপর অপারেশন করা হবে। ততক্ষণ বাচ্চার নড়াচড়া লক্ষ্য করতে বলা হয়। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনওরকম মনিটারিং করা হয় না সোহিনীকে। এদিকে বেলা ১২টার পর থেকে আর বাচ্চার নাড়াচাড়া বুঝতে পারে না সোহিনী।
ডাক্তারকে ফোন করা হলে উনি বেলা ২টোর সময় এসে পরীক্ষা করে দেখেন, শিশু নড়াচড়া করছে না। তিনি বলেন, সকাল থেকেই শিশু নড়াচড়া করছিল না। কিন্তু অনির্বাণের কথা অনুযায়ী ডাক্তার সকালে বলেছিলেন শিশুটি বেঁচে আছে, আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষাতেও তাই দেখানো হয়েছিল। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য একটি ডায়গনোস্টিক সেন্টারে আবার আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে নিয়ে যাওয়া হয় সোহিনীকে।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে গিয়েই জানা যায় শিশুটি আর নেই। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে ফোন করা হলে আবার নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিতে বলেন। এরপর ডাক্তারের কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে গেলে উনি নরমাল ডেলিভারির জন্য ওষুধ দিয়ে দেন। ওই অবস্থায় সোহিনীকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারের পলিক্লিনিকে।
সোহিনীকে সব সত্যি কথা বলেন ডাক্তার নিজেই। এরপর তাঁকে আবার নার্সিংহোমে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। কিছু সময় পরে তিনি নার্সিংহোমে এলে সোহিনীর বাড়ির লোক খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করেন ডাক্তারকে। সবাই মিলে তাঁকে ঘিরে ধরলে তিনি বলেন, তিনি সুগারের রুগী, হাত-পা কাঁপছে ইনসুলিন নিতে হবে।
ইতিমধ্যেই সোহিনীর প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়, কিন্তু ডাক্তার অপারেশন করতে চান না। অবশেষে অনির্বাণ লিখিত দিলে তবে অপারেশন করানো হয়। অনির্বাণের দাবি অনুযায়ী, অপারেশনের পর তিনি সন্তানকে দেখে বুঝেছিলেন যে প্রিইম্যাচিউর বেবি ছিল না। অনায়াসে আগেই অপারেশন করে দেওয়া যেত।
আরও পড়ুন: 'বহুদিন হল নিখোঁজ...', জন্মদিনে কাকে হারিয়ে চিন্তিত শ্রীলেখা?
আরও পড়ুন: শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবি’-র ছায়ায় সিনেমা নিয়ে আসছেন সৃজিত, প্রকাশ্যে মুক্তির তারিখ
তবে এখানেই শেষ নয়, অন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে সোহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য হাসপাতালে, যেখানে সবরকম ব্যবস্থা ছিল। অবশেষে দুদিন পর সুস্থ হয় সোহিনী। তবে এত কিছুর মধ্যে সোহিনী এবং অনির্বাণের দাবি অনুযায়ী, সোহিনীর বর্তমান বয়স ৩১ বছর তাই বয়সজনিত কোনও সমস্যা থাকার কথাই ছিল না।
অন্যদিকে অনির্বাণের কথা অনুযায়ী, ডাক্তার প্রথম দিন থেকে জানতেন সোহিনীর ভিডিয়ো করার কথা। সমস্যা হলে তিনি আগেই বলতেন, কিন্তু চিকিত্সকের পরামর্শ মতোই সবকিছু করেছিলেন সোহিনী। ঘটনাটি অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু চিকিৎসকের কিছু দাবি যে ভুল, সেটা প্রমাণ করার জন্যই পুত্রশোক বুকে নিয়েই ক্যামেরার সামনে এসে বসতে হয় সোহিনী এবং অনির্বাণকে।