বলিউডের দিলীপ কুমার-সায়রা বানুর প্রেম খানিকটা ‘লায়লা-মজনু’র প্রেমের মতোই। তাই ভ্যালেন্টাইনস ডে-র প্রসঙ্গ উঠলেই প্রথমেই মাথায় আসে পুরনো দিনের দিলীপ কুমার-সায়রা বানু জুটির কথা। বর্তমানে দিলীপ কুমারের মৃত্যুর পর একাকী জীবন কাটাচ্ছেন সায়রা বানু। তবে সেটা স্বামীর স্মৃতি আঁকড়েই।
ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে 'ফিল্ম ফেয়ার' ও' বম্বে টাইমস'কে দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে বেশকিছু কথা শেয়ার করেছেন সায়রা বানু। জানিয়েছেন, দিলীপ কুমার, তাঁকে তাঁর জীবনে একাধিক প্রেমপত্র লিখেছেন।
সায়রা বানু বলেন, ‘দিলিপ সাহেব ও আমি হাতে লেখা বেশকিছু চিঠি আদান-প্রদান করেছি। দূরত্ব, প্রাত্যাহিক জীবনের ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও কিছু ঐতিহ্য, আচার আমাদের একসঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। আমাদের কাজের মধ্যে, সাহাব প্রায়ই আমার জন্য সুন্দর ছোট ছোট চিঠি লিখতেন যাঁর প্রত্যেকটি আমার প্রতি ওঁর ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রয়েছে।’
সয়রা বানুর কথা, ‘এখন দুনিয়া বদলে গিয়েছে। তখন টেলিগ্রাম পাওয়া একটা বড় ব্যাপার ছিল। কারণ মোবাইলের অস্তিত্ব ছিল না। আর আপনি বাইরে শুটিং করলে টেলিফোন খুব কমই কাজ করত। প্রায় ২০ দিন ধরে, আপনাকে আপনার প্রিয়জনের কথা না শুনে বেঁচে থাকতে হত।’
আরও পড়ুন-বরের থেকে নয়, বিশেষ কারোর থেকে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সোনার দুল উপহার পেলেন 'শিমুল' মানালি
বেড়ে ওঠার দিনগুলির স্মৃতি ফিরে গিয়ে, সায়রা বানু বলেন তাঁর ঠাকুমা তাঁকে লন্ডনের স্কুলে নিয়ে যেতেন। তাঁর কথায়, ‘সে সময় আপনি কাউকে কিছু তখনই লিখতে বা পাঠাতে পারেন শুধুমাত্র যদি আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। আমি জানি এখন সবকিছুই বদলে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার শিক্ষা পুরনো স্কুলে পড়ার মতোই। তবে আমি সেই সংস্কৃতির প্রশংসা করি।’

দিলীপ কুমারের লেখা চিঠি
তাঁর কথায়, 'বছরের পর বছর ভালোবাসার ভাষা বদলে গিয়েছে। এখন সবই অ্যাপ নির্ভর। রোম্যান্স, কাউকে কোনও বার্তা পাঠানো সবই অ্যাপে হয়। হাতে লেখা চিঠির জায়গা নিয়েছে ইমোজিগু, কবিতা ও প্রেমের চিঠি আর কিছুই নেই। তবে এখনও আমার স্বামীর লেখা চিঠি গুলি আমার হৃদয়ে ধরা রয়েছে।'
তিনি বলেন, ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা কীভাবে মনের কথা বলে! আমরা কবিতা ও চিঠি লিখতাম। আমি লন্ডনে পড়াশুনা করেছি। ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ ও ল্যাটিন ভাষার সঙ্গে ভালভাবে পরিচিত ছিলাম। কিতবে আমি উর্দু ও ফার্সিও শিখেছিলাম কারণ আমার স্বামী সেগুলিতে ভালভাবে পারদর্শী ছিলেন। তিনি আমাকে ইংরেজি ও উর্দুতে চিঠি লিখতেন। আমার উর্দু শব্দ পড়তে কষ্ট হলে, উনি আমাকে নিয়ে মজা করতেন।’

দিলীপ কুমারের লেখা চিঠি
প্রেমের চিঠির কথা বলতে গিয়ে সায়রা বানু বলেন, 'আমাদের একটি দুর্দান্ত প্রেমের গল্প ছিল। আমরা এয়ার হোস্টেসদের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করতাম। যখন উনি কিছুক্ষণ অন্য কারোও সঙ্গে গিয়ে বসতে বাধ্য হতেন। আমি ওকে লিখতাম, 'জান, তোমার কি মনে হয় না আমি অনেক দিন ধরে একা আছি? তুমি কি আমার কাছে ফিরে আসবে?' আমি ওকে মিস করেছি এবং ওকে আমার কাছে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম।
উনি আবার লিখতেন, 'আমি শীঘ্রই ফিরে আসব', এক ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময় লাগবে। কাজের জন্য যাতায়াত করার সময় আমি ওর ব্যাগে ওর ভাঁজ করা শার্টের নিচে নোট রেখে দিতাম। যাতে উনি প্রতিদিন ওগুলো পড়তে পারেন।'
সব শেষে তিনি বলেন, 'দিলিপ সাহাব সবসময় জিজ্ঞাসা করতেন, 'আপ কাহা হো', যদি আমি ওঁর পাশে না বসতাম, তখন বলতাম, 'ম্যায় আপকে ইর্দ গিরদ হি হুঁ'। উনি আমাকে মনেপ্রাণে ভালবাসতেন। তবে আমি ওকে এই বলে রাগিয়ে দিতাম যে, ‘তুমি আমাকে না ভালোবাসলেও ঠিক আছে। আমি তোমাকে আমাদের দুজনের জন্যই যথেষ্ট ভালোবাসি।’