ছেলে আয়ানের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ের বেদনাময় অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন এমরান হাশমি। ছেলের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তিনি ও তার স্ত্রী কীভাবে তাদের দুঃখ লুকিয়ে রেখেছিলেন তা তিনি বর্ণনা করেছেন।
সালটা ২০১৪, ইমরান হাশমির ছেলের বয়স তখন মাত্র ৪। অভিনেতা জানতে পারেন ক্যানসার থাবা বসিয়েছেন ছোট্ট ছোট্ট আয়ানের শরীরে। অতটুকু ছেড়ে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বদলে দিয়েছিল ইমরানের জীবন। সম্প্রতি ইউটিউবার রণবীর আল্লাহাবাদিয়ার পডকাস্ট The Ranveer Show এ এসে সেবিষয়েই কথা বলেছেন ইমরান হাশমি। জানান, ছেলের সামনে কাঁদতে পারতেন না, তাই আলাদা ঘরে গিয়ে লুকিয়ে কাঁদতেন ইমরানের স্ত্রী পারভিন শাহানি।
Ranveer Allahabadia-এর পডকাস্টে উপস্থিত হয়ে অভিনেতা বর্ণনা করেছেন কীভাবে কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার জীবন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক দিনটির কথা স্মরণ করে অভিনেতা জানান, তিনি এবং তাঁর পরিবার সেদিন ‘তাজ ল্যান্ডস এন্ডে’ বসে ব্রাঞ্চ (ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের কম্পিনেশন) উপভোগ করছিল। সেদিনই তাঁর ছেলের প্রথম লক্ষণ দেখা দেয়।
ইমরান লেখেন, ‘একটা বিকেলে আমার জীবন বদলে গেল। ২০১৪-র ১৩ জানুয়ারি, আমরা তাজ ল্যান্ডস এন্ডে ব্রাঞ্চে গিয়েছিলাম। সেদিনই আমার ছেলের প্রথম লক্ষণ দেখা দিল। আয়ানের প্রস্রাবে রক্ত বের হয়। আর এরপরই সে তার মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলল। এটিই ছিল ওর প্রথম লক্ষণ। এক নিমেষে আমাদের সেই আনন্দের ব্রাঞ্চ দুঃস্বপ্নে বদলে গেল। ৩ ঘন্টার মধ্যে আমরা একজন ডাক্তারের ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার আমাদের জানালেন যে আমাদের ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত। পরের দিনই ওর অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং তারপর কেমোথেরাপি চলবে।’
ইমরান হাশমি জানান, এরপর তাঁর ও তাঁর পরিবারের লড়াই শুরু হয়। ছোট্ট আয়ানের কিডনিতে টিউমার ছিল, তার অস্ত্রোপচার হয়। কিডনি ক্যানসারেই আক্রান্ত হয়েছিল ছোট্ট আয়ান। তবে সেজন্য কিডনি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। শুধু টিউমার টুকুই বাদ গিয়েছিল।
দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর অবিরাম উদ্বেগ, অসংখ্য হাসপাতালের দৌডাদৌড়ি করেই কেটে যায় ইমরান ও তাঁর স্ত্রী পারভিন শাহানি। ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে, এই আশাতেই নিয়ে তখন বাঁচছিলেন তাঁরা। আবার ছেলের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সেই কঠিন সময়েও দৃঢ় থাকতে হয়ে তাঁদের।
আরও পড়ুন-‘লোকে ভাবত আমি শুধুই চুমুই খেতে পারি, অভিনয়টা পারি না, সাংহাই…’, বলছেন ইমরান হাশমি
ইমরান হাশমি বলেন, এতটা কঠিন সময়েও কেঁদে হালকা হতে পারেননি তিনি এবং তাঁর স্ত্রী। ইমরানের কথায়, ‘যখন আমরা প্রথম জানতে পারলাম। তখন শত কষ্ট সত্ত্বেও আমরা আমাদের ছেলের সামনে কাঁদতেও পারিনি। আমরা অন্য ঘরে গিয়ে কেঁদে আসতাম। আমরা এই কষ্টটা ছেলেকে বুঝতে দিতে চাইনি। চাইনি যে শরীরের সঙ্গে ও মানসিক ভাবেও প্রভাবিত হোক। এরপর ছোট্ট আয়ানের সুস্থ হতে সময় লেগেছিল অন্তত পাঁচ বছর। আমাদের শক্ত থাকতে হয়েছিল এবং কোনওরকম দুর্বলতা দেখাতে পারিনি।’