স্বপ্ন ছিল দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের একটিতে পড়াশোনা করার। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভর্তি হতে রওনা দিয়েছিলেন আইআইটি খড়গপুরে। কিন্তু মাঝপথেই ঘটল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ট্রেনের শৌচালয়ে যাওয়ার পর আর ফিরলেন না মেধাবী ছাত্র অর্জুন পাতিল। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। জানা যায়, আইআইটি থেকে কোনও ইমেল পাঠানো হয়নি তাঁকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, অর্জুন কি স্বপ্নভঙ্গের আঘাতে ট্রেন থেকে নিখোঁজ হয়েছেন? নাকি ভুয়ো ভর্তি চক্রের শিকার হয়েছেন তিনি?
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার ঘটনা থামছেই না, পড়ুয়াদের মনোবল বাড়াতে পদক্ষেপ আইআইটি খড়গপুরের
মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার চোপড়ার বাসিন্দা ১৯ বছরের অর্জুন, পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী। জানা গিয়েছে, ২০ অগস্ট সকালে বাবা রবীন্দ্রকুমার পাতিল ও মায়ের সঙ্গে শালিমার এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল খড়গপুরে পৌঁছে আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হওয়া। অর্জুন নাকি বাবাকে দেখিয়েছিলেন খড়গপুর আইআইটির পক্ষ থেকে আসা একটি ইমেল, যেখানে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার কথা লেখা ছিল। সেই বিশ্বাসেই পরিবারের সদস্যরা ছেলেকে নিয়ে ভর্তি হতে রওনা দেন। কিন্তু বাস্তব ছবিটা একেবারে ভিন্ন। আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, অর্জুন পাতিল নামে কাউকে কোনও ইমেল পাঠানো হয়নি। শুধু তাই নয়, ওই প্রতিষ্ঠানের ভর্তি প্রক্রিয়াও বহু আগেই শেষ হয়েছে এবং নতুন সেশনের ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ যে ইমেল দেখে অর্জুন ভর্তি হতে যাচ্ছিলেন, সেটি ভুয়ো ছিল বলেই স্পষ্ট হচ্ছে। এখানেই শুরু রহস্য।
পরিবার সূত্রে খবর, ট্রেনটি ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া স্টেশনে পৌঁছনোর সময় অর্জুন তাঁর মোবাইল ফোন চার্জে রেখে শৌচালয়ে যান। তারপর থেকে আর তিনি ফেরেননি। এক মুহূর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে যান তিনি। বাবা-মা মরিয়া হয়ে খুঁজতে শুরু করলেও আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। রেল পুলিশ ও জিআরপি-তে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। চাকুলিয়া ও খড়গপুর জিআরপি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। তবে যেহেতু নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি চাকুলিয়ার কাছাকাছি ঘটেছে, তাই সেখানকার জিআরপি মূলত তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। অর্জুনের বাবা রবীন্দ্রকুমার পাতিল ভগ্নকণ্ঠে জানিয়েছেন, ছেলেকে আইআইটিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ট্রেন থেকে উধাও হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, অর্জুনের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাঁর অবস্থান ট্র্যাক করা যাচ্ছে না। আইআইটি খড়গপুর প্রশাসনও আলাদা করে জানিয়েছে, ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সুতরাং, ওই ইমেলটি যে জাল বা ভুয়ো, তা কার্যত স্পষ্ট।
এই ঘটনার পর জল্পনা বাড়ছে। কেউ বলছেন, ভুয়ো আইআইটি ভর্তি চক্রের ফাঁদে পড়ে মানসিক চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন অর্জুন। আবার অনেকে মনে করছেন, ভুয়ো খবর ফাঁস হওয়ার পর নিজেই পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। যেটাই হোক, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের উদ্বেগ এখন চরমে। দুশ্চিন্তায় ছেলের খোঁজে দিশেহারা বাবা-মা। চাকুলিয়া ও খড়গপুর জিআরপি-র তদন্ত চলছে।