ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে ফের উত্তাল হতে চলেছে বাংলা। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃতদেহ। তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাই। আদালত অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও এখনও পর্যন্ত অপরাধের নেপথ্যে থাকা ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের’ কোনও কিনারা করতে পারেনি সিবিআই। এমনই দাবি নির্যাতিতার পরিবারের। ফলে বছর ঘুরলেও ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন এখনও অনড়।
শুক্রবার আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ন্যায় বিচারের দাবিতে ফের একবার পথে নামছেন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন, নাগরিক সমাজ।আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ৮ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গোটা সপ্তাহজুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। মূল কর্মসূচি ৯ আগস্ট। শনিবার আরজি কর-কাণ্ডে মৃত চিকিৎসকের পরিবার 'নবান্ন অভিযান'-এর ডাক দিয়েছে। রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে এই পদযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, শনিবারের এই কর্মসূচির বিরোধিতা করে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় বৃহস্পতিবার। সেই শুনানিতে মামলাকারী এবং রাজ্য সরকার, দুই পক্ষই নিজেদের বক্তব্য পেশ করে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দিতে পারে না আদালত।
একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, যাঁরা প্রতিবাদে যোগ দেবেন, তাঁরা যেন আইন মেনে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করেন। পুলিশ, সরকারি কর্মী, সরকারি ভবন বা সম্পত্তির কোনও ক্ষতি না করেন। ভারতীয় সংবিধানেও বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হল সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসা না করা।' এদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরজি কর আন্দোলনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, নবান্ন রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করছে। একাধিক শীর্ষ পুলিশ অফিসারকে শিবপুরে জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। একইসঙ্গে, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার, অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ডক্টরস ফোরাম ও অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস মিলিতভাবে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। জেপিডির আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, 'এক বছরের মধ্যেই আবার দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সরকার বারবার ব্যর্থ, তাই আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছি।'
৮ আগস্ট রাতে উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মশাল মিছিল করবে জুনিয়র ডক্টরদের সংগঠন। রাতভর শ্যামবাজার মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।এরপর ৯ আগস্ট সকাল থেকে জেপিডি এবং 'অভয় মঞ্চ'-এর তরফে জনসুরক্ষা ও সচেতনতার বার্তা দিতে 'রাখি' কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৪টেয় হাজরা ক্রসিংয়ে জমায়েত হবেন চিকিৎসকরা। সন্ধ্যা ৬টায় আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে জুনিয়র ডক্টরদের সংগঠন। এছাড়াও, ১৪ আগস্ট কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ ও মোমবাতি মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যরাতে ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ কর্মসূচির মাধ্যমে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামবে সাধারণ মানুষ।
এই আবহে বুধবার দিল্লি রওনা দিয়েছিলেন তিলোত্তমার বাবা-মা। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দিল্লিতে শাহর সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁদের। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে তিলোত্তমার বাবা বলেন, 'সোমবার পর্যন্ত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু, সোমবার পর্যন্ত থাকা সম্ভব ছিল না। শনিবার নবান্ন অভিযান রয়েছে। তাই চলে এসেছি। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার সময় দিলে, অবশ্যই গিয়ে দেখা করব।' একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘সিবিআই-এর ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ১৪০ কোটি মানুষ যাঁদের উপর ভরসা করেন, সেই সংস্থা যে কতটা বোগাস, সেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। সিবিআই-এর ডিরেক্টর নিজে বলছেন এই মামলা ছেড়ে দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি এই কথা আদালতে জানাতে। কারণ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ আদালত দিয়েছিল। আমাদের কোনও প্রশ্নের জবাবই ওঁদের কাছে নেই।’