ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশ। আর তারপর ভারতে এসে এদেশে ভুয়ো নথি বানানোর অভিযোগে প্রায়ই গ্রেফতার হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক। সেই আবহে এবার গুরুতর অভিযোগ উঠল। বেআইনিভাবে ভারতে এসে শুধু ভুয়ো নথিই নয়, এক বাংলাদেশি শিক্ষক বানিয়ে ফেলেছেন গোটা বাড়ি। ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি গৌরসিংজোতে এক বাংলাদেশি তরুণকে গ্রেফতার করতেই প্রকাশ্যে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু সীমান্ত পেরোনোই নয়, দেখা গেল বাংলাদেশের এক স্কুলশিক্ষক ভারতে বাড়ি তৈরি করে রেখে গিয়েছিলেন নথি-সহ এক তরুণকে, যিনি নাম-পরিচয় বদলে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় নাগরিক সেজে বসবাস করছিলেন। (আরও পড়ুন: 'দেশ ভর্তি হয়ে গেছে…', BSF-এর 'অত্যাচার' নিয়ে মামলা, পালটা পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের)
আরও পড়ুন: কালীঘাটে ধৃত বাংলাদেশি কীভাবে পেলেন ‘খাঁটি ভারতীয়’ ড্রাইভিং লাইসেন্স?
গ্রেফতার হওয়া যুবকের আসল নাম অরুণকান্তি রায়, বয়স মাত্র ১৯। তিনি বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার বাসিন্দা। তবে ভারতে এসে নাম পাল্টে হয়েছিলেন অর্ঘ্য বর্মন। গত তিন বছর ধরে গৌরসিংজো এলাকায় থাকছিলেন তিনি। আধার, প্যানকার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স সবকিছুই জাল নথিতে বানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সোমবার বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে এসএসবি’র ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়ন অভিযানে নেমে তাঁকে পাকড়াও করে। পরে খড়িবাড়ি থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশি জেরা ঘিরে আরও বড় তথ্য সামনে আসে। অরুণ জানান, তিনি যে বাড়িতে থাকতেন সেটি একজন বাংলাদেশি স্কুলশিক্ষকের। নাম ভবেশচন্দ্র বর্মন। তিনি আসলে লালমনিরহাটের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কিন্তু ভারতে বাড়ি তৈরি করেছেন এবং নথি জাল করে ভারতীয় নাগরিক সেজেছেন পুরো পরিবার-সহ। তদন্তে জানা গেছে, ভবেশবাবুর স্ত্রী ননীবালা বর্মন, মেয়ে ডিম্পল বর্মন এবং ছেলে সৌরভ বর্মনের ভারতীয় আধার, ভোটারকার্ড, এমনকি জমির দলিলও উদ্ধার হয়েছে। অথচ তাঁরা সকলে এখনও বাংলাদেশেই থাকেন।
অরুণকান্তির কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁর আসল বাংলাদেশি পরিচয়পত্র, আবার ভারতীয় পরিচয়ে তৈরি আধারকার্ড, প্যানকার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। অর্থাৎ দু’দেশের পরিচয়পত্রই ছিল তাঁর কাছে। পুলিশের দাবি, ওই শিক্ষক পরিবারের সরাসরি আশ্রয়ে অরুণ ভারতে ঢুকে পড়ে এবং স্থায়ীভাবে বসে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, স্থানীয় সূত্র বলছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে ভবেশচন্দ্র বর্মন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা নাকি ভোটও দিয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে তাঁদের এলাকায় দেখা যেত। অথচ তাঁদের স্থায়ী বসবাস বাংলাদেশে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবকের সঙ্গে ওই শিক্ষকের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সেই সূত্রেই তাঁকে ভারতে রেখে দেওয়া হয়েছিল। কার্শিয়াংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় জানিয়েছেন, এসএসবি ওই বাংলাদেশি যুবককে তুলে দিয়েছে পুলিশের হাতে। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে।