বউবাজারের বাসিন্দাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের সময় ভয়াবহ ভূমিধসের জেরে ছ’বছর ধরে বাস্তুচ্যুত হয়ে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের জন্য নতুন আশ্বাস দিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার কলকাতা পুরসভার দফতরে কেএমআরসিএল ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র। বৈঠক শেষে ফিরহাদ জানান, ২০২৭ নয়, আগামী ২০২৬ সালের পুজোর আগেই নতুন বাড়িতে ফিরতে পারবেন বাসিন্দারা।
আর পড়ুন: ক'দিন আগেই ঘটে বিপত্তি, পুজোর আগেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে মিলল বড় আপডেট, কাজ শুরু বউবাজারে
পুরসভার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে এবং কেএমআরসিএলের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। কেএমআরসিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই নতুন ভবনের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। এর পর ধাপে ধাপে নির্মাণের কাজ এগোবে। আর নয় মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ফিরহাদ স্পষ্ট করে দেন, বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে আগামী দশ বছর ধরে সেই বাড়ির গুণগত মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি, প্রতি তিন মাস অন্তর কাজের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব থাকবে পূর্ত ও জল সরবরাহ সংক্রান্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত করার। মেয়র এও জানান, নতুন ভবন তৈরি হওয়ার পর যদি আবারও মেট্রোর কাজের কারণে ক্ষতি হয়, তার সম্পূর্ণ দায় নেবে কেএমআরসিএল।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর টানেল খননের সময় বউবাজারে বড়সড় ভূমিধস হয়। মুহূর্তের মধ্যে বহু পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ে, শতাধিক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকে অস্থায়ী আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। যদিও ২০২৩ সালে পুরসভা ২৪টি নতুন বাড়ির অনুমোদন দেয়, প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি ছিল, দ্রুত তাঁদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
গত শুক্রবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় তিনটি মেট্রো প্রকল্প উদ্বোধন করছিলেন, সেই সময় বউবাজারের গৃহহীনরা নিজেদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের অবস্থান মঞ্চে গিয়ে মেয়র সরাসরি আশ্বাস দেন। সোমবারের বৈঠক সেই প্রতিশ্রুতির পরবর্তী পদক্ষেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।বৈঠকে উপস্থিত পরিবারগুলির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা ও অপেক্ষার পর এ দিন প্রথমবার সত্যিকারের স্বস্তি মিলল। তাঁদের আশা, মেয়রের আশ্বাস এবার বাস্তবেই ঘরে ফেরার পথ খুলে দেবে।