4 মিনিটে পড়ুন Updated: 21 Dec 2022, 02:54 PM ISTChiranjib Paul
মাস খানেক ধরে আবাস যোজনা সাংবাদ শিরোনামে। একে ঘিরে চুড়ান্ত সক্রিয় প্রশাসন। চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভও।
আবাস যোজনা বাড়ির দাবিতে প্রতিবাদ।
মঙ্গলবার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী অনেক আগেই নির্দেশ দিয়েছেন, আবাস যোজনায় নামের তালিকায় এমন একটা নামও যেন না থাকে যাদের ঘর প্রয়োজন নেই। মন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন সেই দিনেরই খবর, আবাস যোজনার উপর নজরদারি বজায় রাখতে একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। একজন সাংসদের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় এই কমিটি তৈরি হবে। নাম দেওয়া হয়েছে‘ডিস্ট্রিক্ট ডেভলপমেন্ট কোঅর্ডিনেশন এন্ড মনিটারিং কমিটি’ বা দিশা। এই কমিটির বিরুদ্ধে সুর চড়া করেছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, রাজ্য যেখানে আবাস যোজনার কাজ যাতে সঠিক ভাবে হয় তার জন্য সদা সক্রিয়, তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের এই নজরদারি আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপ।
শুধু প্রশাসন নয় সক্রিয় শাসকদলও
আবাস যোজনার তালিকায় যাতে অবাঞ্চিত নাম না ওঠে তার জন্য সদা সক্রিয় প্রশাসন। উলেখযোগ্য ভাবে সক্রিয় হয়েছে শাসকদলও। একাধিক জেলায় দেখা গিয়েছে, তৃণমূল নেতার প্রসাদপম বাড়ি থাকতেও আবাস যোজনার তালিকা নাম রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’নেমেছে দল। সম্প্রতি কোচবিহার জেলা তৃণমূলের পক্ষ দলীয় লেটারহেডে রীতিমতো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও অঞ্চল সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য, এমন কী আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদপ্রার্থী কারও যেন না নাম না থাকে তালিকায়। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ এই নির্দেশিকা ফেসবুকে তুলে দিয়েছেন।
আবাস যোজনায় নাম থাকা নিয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করেছে বিজেপিও। কারণ, অভিযোগ উঠছে যে সব পঞ্চায়তে তাদের দখলে, সেখানেও চলছে স্বজনপোষণ। বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের বিজেপি পরিচালিত জগদল্লা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুশান্ত শিটের নিজস্ব বিশাল পাকা বাড়ি রয়েছে। তা সত্ত্বেও আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর বাবা ভাস্কর শিটের।
রাজনৈতিক তরজায় আবাস যোজনা
আবাস যোজনায় নাম থাকা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। শাসক-বিরোধী পরস্পরের দিকে আঙুল তুলছে। কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাবার নাম থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একে শাসকদলের ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। অন্য দিকে আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচিও করেছে তারা। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছেন,‘যারা অন্যায় ভাবে ঘর নিয়েছেন তাঁরা টাকা ফেরত দিন। না হলে যোগীর মতো বুলডোজার দিয়ে ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক।’
সার্ভার বিভ্রাট
এ সবের মাঝেই সার্ভার বিভ্রাটে নাম উড়ে গিয়েছে কয়েক হাজার আবেদনকারীর। পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে ২০১৭-১৮ সালের আবেদনকারী ১৯,৬৪০ জনের নাম উড়ে গিয়েছে সার্ভার থেকে। কী করে উড়ল জানা যায়নি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কলকাতা থেকে পঞ্চায়েত দফতরের বিশেষ সচিব সৌমজিৎ দাসকে গলসি যেতে হয়।
আশাকর্মীদের বিক্ষোভ
তালিকায় যাদের নাম উঠেছে তারা কী সত্যি আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির অর্থ পাওয়ার যোগ্য, তা খতিয়ে দেখতে আশা ও আইসিডিএস কর্মীদের সমীক্ষার কাজে পাঠানো হয়। সেই সমীক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হুমকির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। এমনই অভিযোগ একাধিক জেলা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এই হুমকি মূলত আসছে শাসকদলের থেকে। হুগলির ধনিয়াখালিতে কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আশা কর্মীরা। কোথাও আবার আশাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা সমীক্ষার সময় পাকা বাড়ি দেখলেও তালিকা থেকে নাম কাটছেন না।
আবাস যোজনার তালিকায় নাম তোলা নিয়ে দুর্নীতি যে হয়েছে তা স্পষ্ট। কারণ, খোদ শাসক দল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দলের নেতাদের নাম তোলা থেকে বিরত থাকার কথা বলছে। অর্থাৎ আগে এমন নাম অনেক উঠে গিয়েছিল। তার উদাহরণও মিলেছে সাংবাদমাধ্যামে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে। এর যুক্তি হিসাবে কেউ কেউ বলছেন, যে সময় নাম তোলা হয়েছিল তখন তার পাকা বাড়ি ছিল না, পরে হয়েছে। কেন? কী ভাবে?সব নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এই প্রতিবেদনে করা হচ্ছে না।তেমনি একাধিক বিজেপি পঞ্চায়েত পদাধিকারিও নাম রয়েছে তালিকায়। প্রশ্ন হল, আবাস যোজনায় তালিকা নিয়ে কেন এত আলোড়ন?