বৃহস্পতিবার বিধানসভা চত্বর উত্তপ্ত হয়ে উঠল, যা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন। বাংলা ও বাঙালি প্রসঙ্গে আলোচনার সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে উঠতেই প্রবল হট্টগোল শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ক্রমে শাসক ও বিরোধী সংঘাত পৌঁছে যায় ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে। এমনকি বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে মার্শালদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নেমে পড়েন ওয়েলে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রকে হত্যা’ বলে সমালোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: বিধানসভায় ভাঙচুরে দোষী, শাস্তি না দিয়ে ৪ BJP বিধায়ককে সতর্ক করলেন স্পিকার
এদিন অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধী শিবির ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, তৃণমূলে সবাই চোর’ স্লোগানে উত্তাল করে রাখে অধিবেশন। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীও আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, বিজেপি সবথেকে বড় চোর।’ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ‘ভোটচোর’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি। বাংলা বিরোধী এই দলকে উৎখাত করতেই হবে তাঁর এই বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অধিবেশন চলাকালীন একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাধা দেন বিজেপি বিধায়করা। নিয়মভঙ্গের দায়ে শেষে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। এ ছাড়াও সাসপেন্ড হয়েছেন বিজেপির মিহির, বঙ্কিম ঘোষ এবং অশোক দিন্দা। এর পরই উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছয়।
বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তখন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের নিজের আসনে বসতে বলেন একাধিকবার। কিন্তু, তারপরেও নির্দেশ না মানায় স্পিকার মার্শালকে ডাকেন। শঙ্কর ঘোষকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বার করে নিয়ে যেতে বলেন। বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা শঙ্করকে টেনে বার করে নিয়ে যেতেই বিক্ষোভ বাড়তে থাকে বিজেপি বিধায়কদের। ক্রমেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। অন্যান্য বিজেপি বিধায়কেরা নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা দেন। সেই সময় ধস্তাধস্তি বাঁধে। ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন শঙ্কর। তাঁকে জেএন রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকলে পাল্টা প্রতিবাদে শাসক দলের বিধায়করাও ওয়েলে নেমে আসেন। শশী পাঁজা, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না দে নাগ, অসীমা পাত্র, উত্তরা সিংহরায় সহ একাধিক মহিলা বিধায়ক সরাসরি বিজেপির আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন।এই টানটান পরিস্থিতির মধ্যে নিজের আসন ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রীও। ওয়েলে নেমে তিনি সরাসরি দলের বিধায়কদের শান্ত করেন এবং নির্দেশ দেন নিজেদের আসনে ফিরে যেতে। তবে আসনে বসে থেকেই স্লোগান তোলার আহ্বান জানান তিনি। তাঁর হস্তক্ষেপের পরই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিন বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে মার্শালদের হাতাহাতির ঘটনাকে বিরল বলে মনে করেছেন অনেকেই। এর আগেই এই চলতি অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের ঘটনার পর এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গণতন্ত্র কে হত্যা করল? গণতন্ত্র হত্যাকারী মমতা ও তাঁর দলদাস প্রশাসন...’। এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে বিধানসভার ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলে সমালোচনা করেন।