আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার পর ধর্ষণ, খুন, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট এবং দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করতে নেমেছে সিবিআই। ধর্ষণ করে খুনের তথ্য সিবিআই পেয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের কথা বলা হলেও অভিযোগের সত্যতা প্রমাণই এখন সিবিআইয়ের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আপাতত ধর্ষণ–খুনের চার্জশিট শিয়ালদা আদালতে পেশ করে মুখরক্ষা করছেন তাঁরা। কারণ সিবিআই অফিসাররা জানেন, এই একটি বিষয় নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ আর নেই। আর তাই দুর্গাপুজোর আগে ধর্ষণ–খুনের চার্জশিট জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এদিকে আরজি কর হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্যদফতরের দুর্নীতির তদন্ত চলছে। আজও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ–খুনে আর দেরি করতে চাইছে না সিবিআই। কারণ এখন গোটা তদন্তের বিষয়টি দেখছে সুপ্রিম কোর্ট। তাহলে কি ৩০ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে ধর্ষণ–খুনের চূড়ান্ত স্টেটাস রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে জমা দেবে সিবিআই? উঠছে প্রশ্ন। শিয়ালদা আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, গণধর্ষণের কোনও প্রমাণ তাঁরা পায়নি। সুতরাং মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। তাই নির্যাতিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শুনানি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত শুরু করতে চায় তাঁরা। সিবিআই দফতর সেই অঙ্কেই লড়ছেন। ধর্ষণ–খুনে সঞ্জয় ছাড়া দ্বিতীয় কারও নাম চার্জশিটে না থাকলে কলকাতা পুলিশের তদন্ত কৃতিত্ব পাবে। কারণ, সঞ্জয়কে সিবিআই গ্রেফতার করেনি। সেটা কলকাতা পুলিশই করেছিল।
আরও পড়ুন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কড়া বিজ্ঞপ্তি, পদক–পিএইচডি ডিগ্রি বিতরণ অনুষ্ঠান নিয়ে ফরমান
অন্যদিকে আজ, বুধবার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে যান আরজি কর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের মর্গের কর্মী। চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু পর্দাফাঁস করা যাচ্ছে না গোটা ঘটনার। এই নিয়ে এখন জুনিয়র ডাক্তার থেকে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এখন উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান না উঠলেও নজর রাখা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর। এদিন সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দু’জনকে জেরা করেও বড় কোনও তথ্য পাননি সিবিআই অফিসাররা বলে সূত্রের খবর।
সিবিআই এবার ধর্ষণ–খুন মামলার চার্জশিটে ঘটনার বিবরণ, সন্দেহভাজনের ভূমিকার বিস্তারিত তথ্যের সঙ্গে উল্লেখ করবে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের। কিন্তু তার জন্য লাগবে প্রমাণ। তাই একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কারণ, প্রত্যেকটি অভিযোগের সপক্ষে সাক্ষী খাড়া করতে হবে। ন্যায় সংহিতার ৬৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের অপরাধের তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে জমা করতে হয় চার্জশিট। ৬৬ ধারা দায়ের করা হয় ধর্ষণ ও তার জেরে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় ধর্ষণের পাশাপাশি নির্যাতিতাকে হত্যাও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাই হত্যার মামলা দায়ের হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ ধারায় মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সাজা হয়। তাই ধর্ষণ ও খুনের মামলায় চার্জশিট দেওয়ার সময়সীমা ৯০ দিন। এবার সময় বেশি গড়ালে চাপ বাড়বে সিবিআইয়ের এবং সিজিও কমপ্লেক্সের উপর।