উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বৃত্তিমূলক বিষয়ে পরীক্ষায় নম্বর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এবার থেকে এই বিষয়ে নেওয়া হবে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা। তার মধ্যে ৫০ নম্বর থিয়োরি এবং ৫০ নম্বর প্র্যাকটিক্যাল এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে নম্বরের কাঠামো। আগে এই নম্বর বিভাজন ছিল ভিন্ন রকম। তখন প্র্যাকটিক্যালে ছিল ৭০ নম্বর এবং থিয়োরিতে বরাদ্দ ছিল ৩০ নম্বর। এবার সেই অনুপাত বদলে দুই অংশে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন নিয়ম ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
আরও পড়ুন:পাশ করেও ফের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ, বাড়ল আবেদনের সময়সীমা, কত দিন?
এই পরিবর্তনের কথা জানানো হলেও এখনও প্রকাশিত হয়নি সংশ্লিষ্ট পাঠ্যক্রম। পঠনপাঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বইও বহু ছাত্রছাত্রীর হাতে পৌঁছায়নি। ফলে নতুন নিয়ম নিয়ে পড়ুয়া ও শিক্ষক মহলে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ১৬টি বৃত্তিমূলক বিষয় পড়ানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে আইটি, অটোমোবাইল, সিকিউরিটি, রিটেল, হেলথকেয়ার, ইলেকট্রনিক্স, অ্যাপারেল, বিউটি অ্যান্ড ওয়েলনেস, প্লাম্বিং, কনস্ট্রাকশন, অর্গানাইজ়ড রিটেলিং, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটির মতো বিষয়।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ নম্বরের এই পরিবর্তন কেন? সংসদের তরফে জানানো হয়েছে, সেমিস্টার পদ্ধতিতে ৯(২) রেগুলেশন অনুসারে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি আরও তিনটি বিষয়ে পাশ করতেই হবে। কিন্তু ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বৃত্তিমূলক বিষয়ের নম্বর ‘বেস্ট অফ ফাইভ’-এর আওতায় ধরা হবে না। এই নিয়ম ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও অসন্তোষ। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বিষয়গুলির অবস্থান স্পষ্ট নয় ঐচ্ছিক না কি কম্পালসারি ইলেক্টিভ, তা নিয়েও সংসদের নির্দেশিকায় সঠিক দিকনির্দেশ নেই।
এই বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, বৃত্তিমূলক বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে সংসদ যেন এক প্রকার ছেলেখেলা করছে। জাতীয় ও রাজ্য শিক্ষানীতিতে যেখানে এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাদের দাবি, বিষয়গুলিকে বাধ্যতামূলক ইলেক্টিভ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করা উচিত। সেই সঙ্গে স্কুলগুলিতে ল্যাব ও হাতে-কলমে শেখার পরিকাঠামো তৈরির ব্যবস্থাও জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদের তরফে জানানো হয়েছিল, ২০২৩-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিষয়ে ‘ইলেক্টিভ’ হিসেবে পড়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু পরের বছর, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে জানানো হয়, পড়ুয়ারা শুধুমাত্র ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবেই এই বিষয় নিতে পারবে। ফলে একের পর এক নীতিগত বদলে আরও বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষা মহলের মতে, বৃত্তিমূলক শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারকে আরও পরিস্কার অবস্থান নিতে হবে। শুধু নম্বর বিভাজন নয়, পুরো ব্যবস্থাটাই ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। নইলে ছাত্রছাত্রীরা এর প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।