দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হয়েছিল উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। আদালতের নির্দেশ মেনে স্কুল সার্ভিস কমিশন দফায়-দফায় কাউন্সেলিং চালিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। এই অবস্থায় একের পর এক প্রার্থী নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও শেষপর্যন্ত চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন না। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৫০০ জনেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন। তারপরেও তাঁরা চাকরিতে যোগদান করছেন না।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলতে দেব না’ শিক্ষকদের ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের
স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রার্থীদের অনেকেই স্কুলে গিয়ে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে এখনও কাজে যোগ দেননি। অনেকেই আবার জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা এই চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু, এর কারণ কী, তাই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
তবে কমিশনের মতে, মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কর্মস্থল সংক্রান্ত অসন্তোষ। প্রার্থীদের অনেকের অভিযোগ, যেসব প্রান্তিক এলাকায় স্কুলে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, সেগুলি অনেক প্রার্থীরই পছন্দ নয়। ফলে তাঁরা নিয়োগপত্র নিলেও চাকরিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, অনেক প্রার্থীই শহর বা নিজের বাড়ির কাছাকাছি স্কুল নিয়োগ চাইছেন। তবে সেগুলিতে শূন্যপদ না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, ষষ্ঠ দফার কাউন্সেলিং ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবে প্রার্থীদের অনুপস্থিতি ও যোগদানে অনীহার ফলে বহু পদ এখনও খালি থেকে গিয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, শীঘ্রই সপ্তম দফার কাউন্সেলিং শুরু হবে। এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির প্রস্তুতিও চলছে। এখনও অবধি কাউন্সেলিং বাকি রয়েছে ১,৪১০ জন পরীক্ষার্থীর। তবে আরও আশ্চর্যের বিষয় হল ওয়েটিং লিস্টে থাকা অনেক প্রার্থীই এখন কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না বা সুপারিশপত্র পেলেও কাজে যোগ দিচ্ছেন না। ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৮ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে নির্দেশ দেয়, রাজ্যের উচ্চপ্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ১৪,০৫২টি শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে দ্রুত মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেই নির্দেশের পরেই শুরু হয় তালিকা তৈরির কাজ। যদিও তালিকা তৈরির সময়ে জাতিগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এর জেরে ৯৬ জনের নাম বাদ দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর সংশোধিত মেধা তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। পরবর্তী পর্যায়ে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থীদের হাতে সুপারিশপত্র তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বহু প্রার্থী যাঁরা বছর ধরে এই নিয়োগের আশায় ছিলেন, তাঁরাই এখন চাকরি নিতে অস্বীকার করছেন।
প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন সুযোগ মিলেছে, তখন এত সংখ্যক প্রার্থী কেন পিছিয়ে যাচ্ছেন? আরও উদ্বেগের বিষয়, স্কুলগুলির কী হবে? সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন।