শ্বাসনালীতে আটকে গিয়েছিল একটি ধাতব স্প্রিং। তারফলে শ্বাসকষ্ট এবং কফের সঙ্গে রক্তপাতের সমস্যা হচ্ছিল তরুণের। শেষ পর্যন্ত মনিপাল হাসপাতালে স্বস্তি পেলেন তরুণ। চিকিৎসকরা রোগীর শ্বাসনালী থেকে ২ সেন্টিমিটার মাপের ওই স্প্রিংটি বের করেন। ওই রোগীর নাম সুফিয়ান আলি (২১)। তিনি জামশেদপুরের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: হিজাবের পিন আটকে গিয়েছিল কিশোরীর শ্বাসনালীতে, বের করলেন চিকিৎসকরা
সুফিয়ান দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। দুই বছর আগে প্রচুর কফের সমস্যা দেখা দেয়। পরে কফের সঙ্গে রক্তপাত শুরু হয়। সমস্যার সমাধানে একাধিক ইএনটি বিশেষজ্ঞর কাছে যান তিনি। তারা বেশ কিছু ওষুধও দেন সুফিয়ানকে। এরফলে কফ থেকে অস্থায়ীভাবে রক্তপাত বন্ধ হয় ঠিকই কিন্তু, মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। ফের তার কফের সমস্যা হতে থাকে। আর সেই সঙ্গে মাঝে মাঝেই জ্বর আসতে থাকে। শরীরের ওজনও কমতে থাকে। তখন মনিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়েতে যান সুফিয়ান।সেখানে হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট ডঃ অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, উপসর্গ দেখে শুরুতে বোঝাই যায়নি যে আসলে শ্বাসনালীতে ছুঁচলো ধাতব স্প্রিং আটকে রয়েছে। এই ধাতব বস্তু আটকে ছিল ফুসফুসের বাম সাবকারিনালে। অর্থাৎ শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংযোগস্থলে।
চিকিৎসকরা ঠিক করেন ব্রঙ্কোস্কোপির সঙ্গে এন্ডব্রোনকিয়াল আল্ট্রা সাউন্ড করা হবে। কারণ এর উপসর্গ অনেকটাই যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিসের মতো ছিল। কারণ এক্স-রে’তে কিছু ধরা পড়েনি। এরপর উচ্চ রেজোলিউশনের সিটি থোরাক্স স্ক্যান করার ধরা পড়ে একটি দুই সেন্টিমিটার লম্বা ধাতব স্প্রিং রয়েছে। যদিও রোগী এবং তার পরিবার ধাতব বস্তুর উপস্থিতি নিয়ে আগে কিছুই জানতেন না। ফলে স্প্রিং দেখে হতবাক হয়ে যান ডাক্তাররা।
ডঃ অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘এটি কোন সাধারণ ঘটনা নয়। এটি বেশ জটিল পদ্ধতি ছিল। সতর্কতার সঙ্গে বস্তুটি সেখান থেকে বের করা হয়েছে। খুব অল্প রক্তপাত হয়েছে যা সামলানো গিয়েছে। রোগী সুস্থ রয়েছেন।’
পুরো বিষয়টি নিয়ে রোগী সুফিয়ান আলি বলেন, ‘আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে আমার এরকম কিছু হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা ভয়ানক বললেও কম নয়, যা জীবনকে থমকে দিয়েছিল। গত মাসে যখন আমার উপসর্গগুলি আরও খারাপ হতে আরম্ভ করে, তখন আমাকে মনিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়েতে রেফার করা হয়। সেখানে জানতে পারি ছুঁচ জাতীয় কোনও জিনিস শ্বাসনালীতে আটকে গিয়েছিল। গত দুই বছর ধরে এত কষ্ট হচ্ছিল। শেষপর্যন্ত চিকিৎসকদের তৎপরতায় তা বের করা সম্ভব হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রোগীকে। তবে যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিস ধরা পড়ার কারণে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিনের চিকিৎসক ডঃ দেবরাজ যশের অধীনে।