পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে খাদ্য দফতরের সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডিকে আগেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই এবার ফুড এসআইয়ের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতদের নাম হল শঙ্কর বিশ্বাস এবং পাপাই দাস। দুজনেই নদিয়ার বাসিন্দা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী।
আরও পড়ুন: খাদ্য দফতরের ৪৮০ পদের জন্য আবেদন ১৩ লাখ, কারচুপি রোধে বড় পদক্ষেপ PSC-র
সিআইডি সূত্রের খবর, প্রশ্নফাঁস নিয়ে কলকাতার সার্ভে পার্ক থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আগেই একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে তদন্তে নেমে সিআইডি সেই সূত্র ধরে এই দুজনকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গতকাল রাতে গ্রেফতার করে। ধৃতদের আজ আলিপুর আদালতে তোলা হবে জানা যাচ্ছে। সিআইডি সূত্রের খবর, যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে এর মধ্যে শঙ্কর হল নদিয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা। এই শঙ্কর আবার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড হলেন শঙ্কর বিশ্বাস। তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে কর্মরত। ভারতীয় অডিট এবং অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী। তাঁর কাছ থেকে ১১ টি মোবাইল উদ্ধার করার পাশাপাশি একাধিক ব্যাঙ্কের পাশ বই উদ্ধার হয়েছে ।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মূলত এরা এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে হোয়াটসঅ্যাপ সেগুলি ছড়িয়ে দিত। ঘটনায় আরও কারা কারা জড়িত তাই জানার চেষ্টা করছে সিআইডি। এদিন আদালতে তুলে তাদের নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিআইডি আবেদন জানাবে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যে এই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যতগুলি অভিযোগ রয়েছে সেই সমস্ত অভিযোগ একসঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। একইসঙ্গে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নিয়োগ-সহ সব ক্ষেত্রেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা।
প্রসঙ্গত, খাদ্য দফতরে পিএসসির মাধ্যেম ৪৮০ টি শূন্যপদে সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল গত বছর। ২০২৩ সালের ২৩ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছিল আবেদন গ্রহণ এবং শেষ হয়েছিল ২০ সেপ্টেম্বর। এই পদের জন্য পরীক্ষা হয়েছিল গত ১৬ ও ১৭ মার্চ। কিন্তু, পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল, পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্ন টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যেমে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রও বিক্রির অভিযোগ ওঠে। রাজ্যে জুড়ে এই পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী।
এরপরেই বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের হয়। এমনকী চাকরিপ্রার্থীরা পিএসসি ভবনের সামনে এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভও করেন। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৫ জনকে শিলিগুড়িরই বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ ছিল তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে প্রশ্ন পত্রের ছবি তুলে ফাঁস করেছিল। তারপরেই চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ অবরোধ চলতে থাকে। সেই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। তার ভিত্তিতে এই সংক্রান্ত মামলায় সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।