বাংলায় কথা বলার জন্য ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে ভিন রাজ্যে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের। এর জেরে ভিনরাজ্যে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বাংলার শ্রমিকরা। এনিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার এমনই অভিযোগ উঠল খাস কলকাতায়, তাও আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলায় কথা বলার জন্য দুই ছাত্রীকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হেনস্থা, র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল হিন্দিভাষী পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (আরও পড়ুন: কার্তিক মহারাজের নামে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের, কী দাবি অভিযোগকারীর?)
আরও পড়ুন:বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনোলজির হস্টেলে র্যাগিং, রড দিয়ে মারধর, ধৃত ২
জানা যাচ্ছে, বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হস্টেলে একদল হিন্দিভাষী পড়ুয়ার হাতে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন দুই ছাত্রী। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হয়েছে, হস্টেলের ঘর খালি করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে এবং এমনকি পুলিশ কেসের ভয়ও দেখানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার বালিগঞ্জে অবস্থিত হিরণ্ময়ী ছাত্রী হস্টেলে। ঘটনাটি ঘটে গত ২৪ জুন। অভিযোগকারী দুই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, বোর্ড অফ রেসিডেন্টস, অ্যান্টি র্যাগিং সেল এবং রাজভবনে। (আরও পড়ুন: নিজেকে 'নতুন বাংলাদেশের জনক' বানাতে গিয়ে শিষ্যদেরই ক্ষোভের মুখে ইউনুস)
আরও পড়ুন: ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-পাক-চিন, কী ছক কষছে ৩ দেশ? 'জোট' নিয়ে যা বলল ভারত
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, এক গবেষণারত ছাত্রী (এগ্রিকালচার বিভাগের) নেতৃত্বে কয়েক জন আবাসিক তাঁদের ঘরে ঢুকে পড়েন। সেখানে তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়, এমনকি তাঁদের মা-বাবাকেও টেনে এনে অপমান করা হয়। এরপর ওই ছাত্রীরা হুমকি দেন ঘর খালি না করলে পুলিশে কেস করে দেওয়া হবে। বোর্ড অফ রেসিডেন্টস এসে ঘাড় ধরে বের করে দেবে। এমনকি রেজাল্টও আটকে দেওয়া হতে পারে। (আরও পড়ুন: নিজেদের দোষ ঢাকতে আজব দাবি, চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় 'র' দেখতে পায় বাংলাদেশিরা)
আরও পড়ুন: কট্টরপন্থীদের মন পেতে ঢাকায় মন্দির ভাঙল ইউনুসের সরকার, কী বলছে ভারত?
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার জন্য ওই দুই ছাত্রীকে ‘বাংলাদেশি’ বলা হয়। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তদের কেউ কেউ বলেন, ‘এটা ভারত। তাই হিন্দি শেখো, নাহলে বাইরে লাথি মেরে বাইরে বের করে দেওয়া হবে।’ এমনকি সরাসরি বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে এসেছে। অভিযোগ আরও, কয়েক জন বাঙালি ছাত্রীও এই অপমানমূলক আচরণে যুক্ত ছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ওই দুই ছাত্রী জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে ছোটখাটো ঘটনা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি এক কর্তার বিরুদ্ধে তাঁদের অপমান করার অভিযোগও উঠেছে। কারণ তাঁরা বিষয়টি মিডিয়ার কাছে জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। বোর্ড অফ রেসিডেন্টসকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঠানো হয়েছে। হোস্টেল মেট্রনকেও জানানো হয়েছে। তাঁর মতে, অভিযোগকারী ছাত্রীদের হাতে লিখে অভিযোগ জমা দিতে হবে। এই ঘটনা সামনে আসতেই শিক্ষাঙ্গনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বাংলা ভাষাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গেই এমন আচরণ তা-ও আবার রাজ্যের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতান্তই লজ্জাজনক বলে মনে করছেন অনেকেই।