আবারও ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তার ঘটনা সামনে এল। তামিলনাড়ুর একাধিক শ্মশানে ঘুরেও সৎকারের অনুমতি মিলল না বসিরহাটের শ্রমিক নীলমণি ঘোষের (৫৩) মৃতদেহের। শেষ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেহ ফিরিয়ে আনা হয় তাঁর টাকি শহরের বাড়িতে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে আটকে, বাড়ি ফিরতে ‘দিদিকে বলো’-তে ফোন করে সাহায্য চাইলেন শ্রমিক
প্রশাসন ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নীলমণি দীর্ঘদিন ধরে তামিলনাড়ুর কুমারা পার্লালামে একটি বস্ত্র কারখানায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেই কাজের সময় সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। মাথায় চোট পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর গত মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, নিয়ম মেনে হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট এবং প্রয়োজনীয় নথি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ফ্যাক্টরির মালিক নিজেই দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু একের পর এক শ্মশানে নিয়ে গিয়েও দেহ দাহ সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, মৃত ব্যক্তি বাঙালি পরিচয়পত্র দেখে শ্মশান কর্তৃপক্ষ দেহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দেহটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার। শুক্রবার গভীর রাতে নীলমণির দেহ পৌঁছয় টাকিতে। শোকার্ত পরিবারের অভিযোগ, ভিনরাজ্যে বাঙালি হওয়াটাই যেন বড় অপরাধ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মৃতের দাদা অসিত ঘোষ জানান, ভেবেছিলেন সেখানেই দাদার শেষকৃত্য সেখানেই হবে। কিন্তু পরিচয় শুনেই সৎকার করতে দেওয়া হল না। তাই দেহ নিয়ে আসতে বাধ্য হলেন। ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বসিরহাট জেলা পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান জানিয়েছেন, সঠিক তথ্য জানার জন্য তামিলনাড়ুর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। ভোটার তালিকা নিয়ে এসআইআর বিতর্কের আবহেই এমন একটি ঘটনা সামনে আসায় নতুন করে ক্ষোভ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ভিনরাজ্যে রুটি-রুজির সন্ধানে গিয়ে যদি শেষকৃত্যের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়, তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা কোথায়?