২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে নন্দীগ্রামে নতুন সমীকরণ গড়তে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে দলের ভেতরে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। যদিও প্রকাশ্যে রাজীব জানিয়েছেন, তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তাঁর কথায়, নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গটা পুরোপুরি রটনা। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে জোরচর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের সভায় হঠাৎ শুভেন্দুর নামে ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান, নন্দীগ্রামে জোর জল্পনা
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জেলা ও ব্লক ধরে ধরে বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সাংগঠনিক বৈঠক করছেন। বেশিরভাগ বৈঠক ইতিমধ্যেই শেষ। বাকি রয়েছে শুধু নন্দীগ্রাম। সেই কেন্দ্রকে ঘিরেই দলের ভেতরে চলছে আলাদা প্রস্তুতি। ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নন্দীগ্রামের জন্য বিশেষ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নন্দীগ্রামে বহুদিন ধরেই তৃণমূলের ভেতরে তীব্র গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব এবং প্রার্থীপদে একাধিক দাবিদার থাকার কারণে শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে বাইরের কাউকে সামনে আনতে। সেই জায়গাতেই উঠে এসেছে রাজীবের নাম। রাজীব তমলুক লোকসভা এলাকায় পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। নন্দীগ্রাম যেহেতু ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, তাই স্থানীয় সংগঠন ও নেতাদের সঙ্গে তাঁর পরিচিতিও রয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুকে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যদিও দেবাংশু শেষ পর্যন্ত বিজেপির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন, তবুও সংগঠনের দায়িত্ব সামলানোয় রাজীবের ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল তৃণমূল। গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নন্দীগ্রাম থেকে লড়েছিলেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। টানটান ভোটযুদ্ধের শেষে তিনি ১,৯৫৬ ভোটে পরাজিত হন। দলের ভেতরে তাই একপ্রকার পরিষ্কার, মমতা আর নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন না। ফলে নতুন মুখ খুঁজছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, নন্দীগ্রামে তৃণমূল প্রায় ৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। এই পরিসরে রাজীবের পক্ষে জয় পাওয়া সহজ নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে দল মনে করছে, যদি তিনি মাটি কামড়ে লড়াই দেন, ভবিষ্যতে তাঁকে ‘সম্মানজনক পুনর্বাসন’ দেওয়া সম্ভব। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি অনেকটা ২০১৪ সালে বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্দ্রনীল সেনকে দাঁড় করানোর কৌশলের মতোই। সেই ভোটে হেরে গেলেও পরে ইন্দ্রনীলকে বিধানসভা জিতিয়ে মন্ত্রী করেছিলেন মমতা।
উল্লেখ্য, রাজীব একসময় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে পদ্ম প্রতীকেও ভোটে লড়েছিলেন, তবে পরাজিত হন। কিছুদিনের মধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তাঁকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং সম্প্রতি হাওড়া জেলা পরিষদের মেন্টর করা হয়েছে।