ঘুম ভাঙতেই বিছানায় মেয়েকে না পেয়ে চিৎকার শুরু করেছিলেন মা। আওয়াজ শুনে ছুটে এসেছিলেন প্রতিবেশীরা। দম্পতি দাবি করেছিল, ঘর থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের দেড় বছরের কন্যা। বাঁকুড়ার বগা গ্রামের এই ঘটনায় প্রথমে শোকের ছায়া নামলেও দু’দিনের মাথায় বদলে গেল পুরো ছবিটা। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় আড়াই দিন পর উদ্ধার হল শিশুর হাড়গোড়। আর চাঞ্চল্যকরভাবে অভিযোগ, বাবা, মা-ই শিশুকে খুন করেছে।
আরও পড়ুন: অপরহরণ করে তুলে নিয়ে মারধর, ফের খুন তৃণমূল কর্মী, কাঠগড়ায় বিজেপি
জানা গিয়েছে, শনিবার শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার প্রায় আড়াই দিন পর একটি পুকুরপাড়ের ঝোপ থেকে হাড়গোড় উদ্ধার হয়। এর পরেই সন্দেহের আঙুল যায় শিশুর বাবা ও মায়ের দিকে। ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে মেয়েটির বাবা প্রশান্ত বাউরি ও মা মুন্নি বাউরিকে। পুলিশের সন্দেহ, এই নিখোঁজের নাটক আসলে দম্পতির সাজানো গল্প। আর তার আড়ালে হয়তো লুকিয়ে রয়েছে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে ঘরের দরজা খুলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন দম্পতি। প্রচণ্ড গরম থাকায় মেঝেতে বিছানা পেতে স্বামী-স্ত্রী শুয়েছিলেন দু’ধারে, আর মাঝে ছিল তাঁদের তিন সন্তান। এর মধ্যেই দাবি করা হয়, রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা ঘরে ঢুকে মাঝখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে দেড় বছরের কন্যাকে। অভিযোগ পেয়েই রীতিমতো তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। নামানো হয় কুকুর। স্থানীয় বাসিন্দারাও তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকেন শিশুটিকে। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার গোপন সূত্রে তথ্য আসে এই নিখোঁজের পেছনে মা-বাবার হাত থাকতে পারে। সেই খবরের ভিত্তিতে ফের জেরা শুরু হয় দম্পতিকে। অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করেন দু’জনেই। পরে পুলিশি জেরায় দুজনে ভেঙে পড়েন। পরে প্রশান্তর দেখানো জায়গা থেকেই উদ্ধার হয় হাড়গোড়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে, সেগুলি শিশুটিরই।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানান, ‘উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়গুলি যে একটি শিশুর, সে বিষয়ে আমরা প্রায় নিশ্চিত। তবে তা নিখোঁজ শিশুটিরই কি না, তা জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, আদৌ এটা অপহরণ ছিল, নাকি ছেলেমেয়ের খুনি মা-বাবাই!’ আজ রবিবার ধৃত দম্পতিকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হবে।