নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে এবার আরও কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেও অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত নথি জমা না দেওয়ায় একাধিক নার্সিংহোমকে শোকজ করা হল। আগামী এক মাসের মধ্যে এই অনিয়ম সংশোধন না হলে নার্সিংহোমগুলিতে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে প্রশাসন। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত একাধিক নার্সিংহোমকে সম্পর্কে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিয়ম মানছে না, যা খুশি করছে, ৪১ নার্সিংহোমকে শো কজ করল স্বাস্থ্য় দফতর
জানা গিয়েছে, কাঁথি, হেঁড়িয়া, বাজকুল ও চণ্ডীপুর এলাকার মোট ১০টি নার্সিংহোমকে শোকজ নোটিশ ধরানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চণ্ডীপুরের এড়াশাল, হেঁড়িয়া এবং বাজকুলের কিছু নার্সিংহোম, এদের ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস সার্টিফিকেট এখনও জমা পড়েনি। যদিও তারা আগেই আদালতে হলফনামা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) অসিত দেওয়ান জানান, এইসব নার্সিংহোম ৪-৬ মাস সময় নিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও নথি জমা দেয়নি। তাই শোকজ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এরপর রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ জুন চণ্ডীপুরের এড়াশালের এক নার্সিংহোম কর্ণধারকে স্বাস্থ্য দফতরের অফিসে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং শোকজ চিঠিও ধরানো হয়েছে। তিনি ২৩ এপ্রিলের মধ্যে ফায়ার সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা মানেননি। একইভাবে হেঁড়িয়ার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সব নথি জমা দেবে। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো না থাকায় তারা এখনও সেই সার্টিফিকেট জমা দিতে পারেনি। ৯ জুন তাদেরও স্বাস্থ্য অফিসে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং লিখিত শো-কজ চিঠি ধরানো হয়েছে।
বাজকুলের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আরও একধাপ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, দমকল দফতরের ছাড়পত্র বা এনওসি না থাকার অভিযোগ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর এবং জেলা এনফোর্সমেন্ট শাখার তরফে ভূপতিনগর থানায় দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ২ জুন থানার ওসি ওই নার্সিংহোমের কর্ণধারকে থানায় তলব করেছিলেন।
জেলার প্রায় ৪০টি নার্সিংহোমের মধ্যে বেশিরভাগই কাঁথি ও চণ্ডীপুরে অবস্থিত। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই জমছিল। এবার সেগুলি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর কড়া পদক্ষেপে নামল। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক নার্সিংহোম ও হাসপাতালের জন্য ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
এই পরিস্থিতিতে নার্সিংহোমগুলির মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র উদ্বেগ। কেউ দৌড়ঝাঁপ করছেন স্বাস্থ্য ভবনে কেউ আবার সংগঠনের মাধ্যমে মিটমাটের চেষ্টা করছেন। এক নার্সিংহোম কর্ণধার বলেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে। খুব শিগগিরই সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হবে।তবে স্বাস্থ্য দফতরের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। তারা জানিয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি বা কথায় নয়, বৈধ শংসাপত্র ও বাস্তব পরিকাঠামো না থাকলে কোনওভাবেই নার্সিংহোম চালু রাখতে দেওয়া হবে না।