বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ পাল্টালে তার প্রভাব পড়ে সরাসরি বাজারে। এবার সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া এসে পৌঁছেছে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায়। ভারত-চিন সম্পর্কে নতুন করে উষ্ণতা ফিরতে পারে এমন সম্ভাবনাতেই আশার আলো দেখছেন এখানকার পরচুলা ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, সরাসরি চিনের সঙ্গে ব্যবসা ফের শুরু হলে লাভের অঙ্ক একধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে।
আরও পড়ুন: চিনের মাটিতে জিনপিংয়ের মুখোমুখি মোদী, ঘুম কি উড়বে ওয়াশিংটনের?
কান্দি মহকুমা ও আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার পরিবার প্রজন্ম ধরে এই চুলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। ঝরে পড়া চুল সংগ্রহ করে তা ধুয়ে-সাফ করে গোছা আকারে বান্ডিল বানানো হয়। সেখান থেকে তা রফতানি হয় বিদেশে। একসময় চিনা ক্রেতারা সরাসরি কান্দি থেকে চুল কিনতেন। কিন্তু সীমান্তে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। চুল রফতানি শুরু হয় ভায়া থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের এজেন্টদের হাত ধরে। এতে লেনদেনের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি লাভের অঙ্কও কমে গিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এখন আর চিনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন হয় না। বাধ্য হয়ে ঘুরপথে চুল রফতানি করতে হচ্ছে। ফলে লাভ অনেকটাই কমে গিয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কে আবার স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক সেটাই তাঁরা চান। প্রধানমন্ত্রী যদি চিন সফরে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেন, তা হলে ব্যবসার উন্নতি হবে। জেলা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কথায়, ভারত-চিনের বাণিজ্য বন্ধ হয়নি ঠিকই। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরাসরি চুলের ব্যবসা বন্ধ। বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভায়া রুটে রফতানি করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। শুল্ক কমানো হোক এবং সরাসরি আমদানি-রফতানির সুযোগ ফের খোলা হোক সেটাই তাঁরা চান। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন সফর থেকে ভালো খবর আসবে বলেই তাঁরা মনে করেন। ভারত-চিন সম্পর্ক মজবুত হলে কারবারের ফের সোনালি দিন ফিরবে।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দশক আগে এই অঞ্চলের পরচুলা শিল্পে যে সোনালি অধ্যায় ছিল, তা মূলত চিনা বাজারকে কেন্দ্র করেই দাঁড়িয়ে ছিল। সস্তায় শ্রমশক্তি এবং মানসম্মত চুলের জন্য মুর্শিদাবাদের পরচুলার আলাদা কদর ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে ব্যবসায় ভাটা পড়ে। এখন যদি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়, তবে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।